Advertisement
E-Paper

খুন বিজেপি কর্মীকে, ধৃত তৃণমূলের ১

হারাধনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মাঠ থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে তিনি বাড়ির কাছেই খেলার মাঠে শুয়ে ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:২১
নিহত হারাধন মৃধা। নিজস্ব চিত্র

নিহত হারাধন মৃধা। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা নির্বাচনে নদিয়া জেলায় বড় ধরনের কোনও হিংসা, সন্ত্রাস বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের সাত দিন বাকি থাকতে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিতদের বিরুদ্ধে। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধল জনতার। জেলা সদর কৃষ্ণনগরে মৃতদেহ নিয়ে ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধও হল। প্রধান অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও আট জন ফেরার।

নদিয়ার ভীমপুর থানার এলাঙ্গি গ্রামের চাষি, বছর পঞ্চাশের হারাধন মৃধাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল গত বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে দলের তরফে দাবি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপি করার অপরাধেই তৃণমূলের লোকজন তাঁকে খুন করেছে। ধৃত সুজিত বিশ্বাস তো বটেই, অভিযুক্তেরা সকলেই তৃণমূল কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। যদিও তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে।

হারাধনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মাঠ থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে তিনি বাড়ির কাছেই খেলার মাঠে শুয়ে ছিলেন। কাছেই কালীমন্দিরে পুজো ছিল। সেখান থেকে জনা দশেক তৃণমূলের লোক এসে তাঁকে বেধড়ক মারতে থাকেন। বাঁচাতে এসে মার খান তাঁর ছেলে স্মরজিৎ মৃধাও। তিনিই কোনও মতে পালিয়ে বাড়িতে খবর দেন। তার মধ্যেই হারাধনকে টানতে-টানতে প্রথমে কালীমন্দিরে, তার পরে তৃণমূল কর্মী সুজিত বিশ্বাসের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।

এলাঙ্গি গ্রামের বাড়িতে হারাধন মৃধার স্ত্রী ও মেয়ে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রত্যক্ষদর্শী রাসমণি মৃধা, কল্যাণী বিশ্বাসদের দাবি, “মানুষটাকে হাত-পা ধরে ওরা দুলিয়ে-দুলিয়ে গাছের গায়ে আছাড় মারছিল! মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আমরা বারবার অনুরোধ করছিলাম ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ওরা শুনল না।” মারের চোটে হারাধন অজ্ঞান হয়ে যান। হামলাকারীরাই তাঁর চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে শৌচাগারে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

ইতিমধ্যে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তারাই হারাধনকে উদ্ধার করে প্রথমে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখান থেকে পাঠানো হয় শক্তিনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাঙ্গি গ্রাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গেলে ধুন্ধুমার বেধে যায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দু’টি গাড়ি। গ্রামবাসীর ছোড়া ইটের ঘায়ে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে ৬ জন আহত হন।

শুক্রবার সকালে হারাধনের ছেলে স্মরজিৎ ভীমপুর থানায় সুজিত বিশ্বাস, বাবলু বিশ্বাস, গণেশ বিশ্বাস-সহ মোট ন’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে শুক্রবার সকালে ভীমপুর থানার সামনে কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়ক ঘণ্টাখানেক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হারাধনের বিরুদ্ধে উল্টে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছিল সুজিত। তবে পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার জানান, অভিযোগ পেলেও হারাধনকে গ্রেফতার করা হয়নি।

কৃষ্ণনগরে দেহ নিয়ে পুলিশ সুপারের দফতরের দিকে যাওয়ার সময় পথ আটকাল পুলিশ।

শুক্রবার বিকেলে হারাধনের দেহ নিয়ে কৃষ্ণনগর শহরে রবীন্দ্রভবনের সামনে অবরোধ করে অবস্থানে বসে বিজেপি। গোটা এলাকা ব্যারিকেড করে ফেলে পুলিশ। অভিযুক্ত ন’জনের প্রত্যেকে গ্রেফতার না-হওয়া পর্যন্ত অবরোধ উঠবে না এবং দেহ সৎকার করা হবে না বলে হুমকি দেন বিক্ষোভকারীরা। দফায়-দফায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার। শেষে রাত সওয়া ৮টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

পারিবারিক সূত্রের খবর, হারাধন সিপিএম করতেন। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মিথ্যা অভিযোগে তৃণমূল তাঁকে আর তাঁর ভাই সাধনকে জেল খাটায় বলে অভিযোগ। কিন্তু এর পরেও এই গ্রাম থেকে পঞ্চায়েতে সাত ভোটে জেতে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগেও তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ।

দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ভীমপুরে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুক্রবার।

বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “বিজেপির বাড়বাড়ন্ত দেখে আতঙ্কিত তৃণমূল। তাই তারা বিজেপি কর্মীদের একের পর এক খুন করে চলেছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত পাল্টা দাবি করেন, “তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কারা খুন করল, পুলিশ তা খুঁজে বের করুক।” তৃণমূল কর্মী গ্রেফতার হলেও পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘গ্রাম্য বিবাদের জেরে এই খুন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Trinamool TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy