Advertisement
E-Paper

পাকা ঘুঁটি কাঁচাতেই পারে ক্ষোভ

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। 

মনিরুল শেখ 

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বাম আমলের শেষ দিক। সাচার কমিটির রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের আর্থিক অবস্থার করুণ চিত্র। অনেকের মতে, সেই সময় থেকেই মুসলিম ভোট দ্রুত বামেদের থেকে সরে যেতে শুরু করে। রাজ্যে পালাবদলের পরে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সে বারে মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ তাদের পক্ষে গিয়েছিল। কিন্তু এখনও কি সেই ভোট পুরোপুরি তাদের সঙ্গে আছে?

তৃণমূলের দাবি, আছে। অসমে যখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জির নামে মুসলিমদের একাংশকে দেশছাড়া করতে চেয়েছিল কেন্দ্র, সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতানেত্রীরা। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের এ বারের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রও ছিলেন। এখনও মোদী-অমিত শাহের নাগরিক পঞ্জি চালু করার হুঙ্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছে তৃণমূল।

তৃণমূলের ধারণা, এর ফলে মুসলিম জনসমাজ নিরাপত্তার কথা ভেবেই এককাট্টা হয়ে তাদের ভোট দেবে। জেলা জুড়ে মুসলিমদের একাংশও মনে করেন, এই আমলে তাঁরা মাথা তুলে রাস্তায় হাঁটতে পারছেন। নিরাপত্তার অভাব নেই। মুসলিম পড়ুয়াদের ব্যাপক হারে বৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত ৫০ শতাংশের কম নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদেরও বৃত্তি দিচ্ছে এই সরকার। ফলে সব পড়ুয়াই পাচ্ছে সরকারি টাকা। আর করবস্থান ঘেরার প্রকল্প তো রয়েছেই। গরিব মানুষের জন্য যে সব জনমোহিনী প্রকল্প রয়েছে, সে সবেরও সুবিধা পাচ্ছেন গ্রামীণ মুসলিমেরা। ফলে মুসলিম ভোটের প্রায় সবটাই এ বার তাঁদের ঝুলিতে আসবে বলে তৃণমূল নেতারা আশাবাদী। দিনকয়েক আগে তৃণমূলের জেলা স্তরের এক প্রথম সারির নেতা ঘরোয়া আড্ডায় বলেন, কৃষ্ণনগর আসন তৃণমূলের জন্যই বরাদ্দ। ওখানে প্রায় ৩৭ শতাংশ মুসলিম ভোট। ফলে মহুয়া মৈত্রের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।

কিন্তু বাস্তবটা এতটা সরলরৈখিক না-ও হতে পারে। প্রথমত, বাংলার মুসলিমেরা কখনই একবগ্গা হয়ে ভোট দেন না। সংখ্যালঘু মাত্রেই যে সব সময়ে শাসকদলের সঙ্গেই থাকবেন, তারও কোনও মানে নেই। বাম আমলে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের মতো মুসলিম প্রধান জেলাগুলিতে কংগ্রেসের প্রাধান্য ছিল। আর বিজেপি নেতারা যতই নাগরিক পঞ্জি নিয়ে তর্জন-গর্জন করুন, নিরাপত্তার অভাব বাংলার মুসলিমেরা এখন তেমন অনুভব করেন না।

সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে লোকসভা নির্বাচনেও বহু সময়ে স্থানীয় নানা বিষয়ও কাজ করে। যেমন গোটা রাজ্যের মধ্যে নদিয়া এক মাত্র জেলা যেখানে বড় মুখ করে বলার মতো কোনও মুসলিম নেতা তৃণমূলের নেই। জেলায় কোনও শক্তিশালী মুসলিম বিধায়ক নেই। জেলা পরিষদে সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ, মেন্টর মিলিয়ে ১৩টি পদের মধ্যে মাত্র একটিতে রয়েছেন মুসলিম মহিলা, তারান্নুম সুলতানা।

মুসলিম সমাজে আগের চেয়ে শিক্ষার হার বেড়েছে। নিজেদের উদ্যোগে তৈরি নানা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ে প্রত্যন্ত গ্রামের পরিবারের ছেলেমেয়েরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন। স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা শেষ করা ছেলেমেয়ের তো ছড়াছড়ি। শিক্ষিত এই শ্রেণি কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে মুসলিমদের না থাকা ভাল চোখে দেখছেন না।

কৃষ্ণনগর-২ ব্লকে গ্রামগঞ্জের মুসলিম নেতারা তো মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করেন, পুরো রাজনীতিটাই ধুবুলিয়া বাজারকেন্দ্রিক। সেখানে মুসলিমদের বিশেষ পাত্তা দেওয়া হয় না। এ আমলে মুসলিমদের জন্য যা কিছু করার কথা বলা হচ্ছে তা আদতে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পুরোটাই চলছে চমকের উপর। ১০ শতাংশ মুসলিম সংরক্ষণ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। হরিণঘাটা ব্লকের মুসলিম নেতারা মাঝেমধ্যেই জানান, সেখানে দল চলছে তিন-চার জনের কথায়। কোনও মুসলিম মুখ নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমদের ভূমিকা নেই। ফলে চাকরি-বাকরি থেকে শুরু করে যখনই কোনও সুবিধা দল বিতরণ করে, তা থেকে বঞ্চিতই থেকে যান মুসলিমেরা।

এই ক্ষোভের জেরে মুসলিমদের একটা অংশ যদি তৃণমূলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, আশ্চর্যের কিছু নেই। বিজেপির দিকে যদি তেমন না-ও যান, কৃষ্ণনগর লোকসভায় মুসলিম ভোটের একাংশ বাম ও কংগ্রেসের দিকে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে চাপড়ায় এক সময়ে বাম-কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সেখানে তৃণমূলের দু’এক জন মুসলিম নেতার সম্পদবৃদ্ধি সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। দলের অন্দরেই এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। বিজেপিও অবশ্য মুসলিম ভোট পেতে মরিয়া। তাই চাপড়ায় কেন্দ্রীয় নেতা শাহনওয়াজ হোসেনকে দিয়ে সভা করানো হয়েছে।

কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে আবার কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিচারক ইনতাজ আলি শাহকে। তাদের আশা, এতে মুসলিম সমাজের একাংশ তাঁকে ভোট দিতে পারেন। বিশেষ করে চাপড়া, কালীগঞ্জের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার লোকজন। আবার রাজ্য বিজেপিতে মুকুল রায়ের মতো তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মুখ থাকায় মুসলিম সমাজের ছোট্ট একটা অংশ সে দিকেও ঝুঁকতে পারে। স্থানীয় নেতাদের উপরে রাগের জেরে তৃণমূলকে শিক্ষা দিতেও কিছু মুসলিম পদ্মফুলে বোতাম টিপতে পারেন। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাকি দুই তরফ যদি মুসলিম ভোটে ভাগ বসায়, তা হলে অবশ্য অঙ্কটা পাল্টে যাবে।

Lok Sabha Election 2019 BJP 'TMC CPIM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy