Advertisement
E-Paper

রেট চড়া, ডেট নেই দেওয়াল শিল্পীর

তাঁরা এখন প্রার্থীদের থেকেও ব্যস্ত। আজ কথা বললে তিন দিন পরে ‘ডেট’ মিলছে। অথচ চুন করা দেওয়াল ফাঁকা পড়ে আছে। উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। 

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৬
রানাঘাটে সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাসের প্রচারে ব্যঙ্গচিত্র। নিজস্ব চিত্র

রানাঘাটে সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাসের প্রচারে ব্যঙ্গচিত্র। নিজস্ব চিত্র

মাথাপিছু দৈনিক হাজার থেকে বারোশো টাকা পারিশ্রমিক। সেই সঙ্গে আরও শ’দুয়েক টাকা চা-টিফিন বাবদ।

এই লোকসভা ভোটের মরসুমে এক জন পেশাদার দেওয়াল লেখকের এটাই ‘রেট’। তবে এই টাকা কবুল করলেই দেওয়াল লেখার লোক মিলবে, এমন কথা ভাবার কারণ নেই। তাঁরা এখন প্রার্থীদের থেকেও ব্যস্ত। আজ কথা বললে তিন দিন পরে ‘ডেট’ মিলছে। অথচ চুন করা দেওয়াল ফাঁকা পড়ে আছে। উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।

ভোটের দেওয়াল দলীয় কর্মীরাই লিখবেন, বামপন্থীদের এটা চিরকালীন রেওয়াজ। এক সময়ে ভোটের মরসুমে সকলের আগে মাটির হাঁড়িতে গোলা লাল রঙ আর সরু তুলি হাতে দেওয়াল দখলে নামতেন বামদলের নেতা-কর্মীরা। অনেকেই পেশাগত জীবনেও শিল্পী ছিলেন। এখনও সেই ধারা মেনেই ভোটের দেওয়াল লেখেন দলীয় কর্মীরা। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে এ বার তৃণমূল আর বিজেপিও ‘নিজের দেওয়াল নিজে লেখো’ লাইন ধরছে। দলে কদর বাড়ছে তাঁদের, যাদের তুলিটা ভাল চলে।

রবিবার ভরদুপুর। নবদ্বীপে রানির চড়া অঞ্চলে কয়েক জন অনুগামী নিয়ে দ্রুত হাতে দেওয়ালে জোড়াফুল আঁকছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর মিহিরকান্তি পাল। পেশাদার শিল্পীর মতো পোক্ত হাতে এক-এক টানে সাদা দেওয়ালে ফুটে উঠছিল রঙিন ঘাসফুল। ভোটের মুখে আর সব কাজ ফেলে কাউন্সিলরকে তুলি ধরতে হল কেন? মিহিরবাবু বলেন, “এক জন লেখকের জন্য দৈনিক প্রায় বারোশো টাকা খরচ করে ওয়ার্ডের সব দেওয়াল লেখাতে বিপুল টাকার দরকার। সেটা সম্ভব নয়। এক সময়ে নাটক করতাম। সেট এবং পোশাক তৈরি করেছি নিজের হাতে। সেই বিদ্যাই এখন কাজে লাগছে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপির সমস্যা কিছু বেশি। সোমবার পর্যন্ত তাঁদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়ায় শুধু প্রতীক আর দলের নাম লেখার জন্য পেশাদার লেখকদের অত টাকা দিতে গায়ে লাগছে। তাই তাঁরাও রঙতুলি ধরেছেন।

বিজেপির নবদ্বীপ উত্তর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ দাস বলেন, “রবিবার থেকে বাবলারি পঞ্চায়েত অঞ্চলে দেওয়ালে প্রতীক আঁকার কাজ শুরু করেছি। আমাদের বহু দলীয় কর্মী আছেন যাঁরা শিল্পী। যেমন আমি বা গোবিন্দ কংসবণিক। এ বার পেশাদার লেখকদের টাকার খাঁই খুব বেশি। এক বেলার জন্য ছ’শো টাকা চাইছে। সারা দিনের জন্য হলে আটশো, হাজার এমনকি বারোশো টাকা পর্যন্ত। এত টাকা দিয়ে দেওয়াল লেখানো সম্ভব নয়।”

সোমবার ঠা-ঠা রোদে নবদ্বীপে বাইপাস রোডে দাঁড়িয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রমা বিশ্বাসের জন্য দেওয়াল লিখছিলেন তিন জন। ডিওয়াইএফ-এর নবদ্বীপ ১ নম্বর কমিটির সভাপতি কানাই গড়াই, মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্কমেন্স ফেডারেশনের খোকন কর এবং সিপিএম সমর্থক বাপ্পা সাহা। বলছেন, “আমাদের দলে ভাড়া করা সৈনিক দিয়ে কাজ করানোর রীতি কোনও দিনই ছিল না, আজও নেই। অত টাকা দিয়ে দেওয়াল লেখানোর পয়সা কোথায়? আমরা মনে করি, দেওয়াল লেখাটাও একটা ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ। সকাল থেকে বিকেল সব জায়গায় আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা দেওয়াল লিখছেন। এ কাজ আমাদের প্রায় শেষের মুখে।”

দেওয়াল দখলে শাসকদল বাকিদের চেয়ে ঢের এগিয়ে। কিন্তু চিন্তা বাড়িয়েছে লেখকের অভাব। সেই সঙ্গে সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেওয়াল লিখন নিয়ে শাসক-বিরোধী সকলেই একটু ধীর কদমে চলছে।

চুন থেকে রঙের দাম, তুলি থেকে আঠা সব কিছুই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা জানাচ্ছেন, এক জন পেশাদার লেখক সারা দিনে প্রমাণ সাইজের বড় জোর আট-দশটা দেওয়াল লেখেন। ছোট দেওয়াল হলে সংখ্যাটা দ্বিগুণ।

পেশাদার লেখক প্রদীপ দাস আবার বলেন, “যদি বড় দেওয়াল হয়, সঙ্গে কার্টুন-ছড়া থাকে তা হলে অনেক সময় লাগবে। ছোট দেওয়ালে অল্প লেখা হলে গোটা কুড়ি হতে পারে, তার বেশি নয়। চড়া রোদে সাদা চুন করা দেওয়াল লিখতে সময়ও লাগে।”

পঞ্চাশ বছর ধরে দেওয়াল লিখছেন এলাকার পরিচিত শিল্পী শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। মানুষটি বলেন, “একটা সময়ে দেয়াল লিখতাম পার্টি কর্মী হিসাবে। তখন পয়সার প্রশ্নই ছিল না। ২০০০ সালের পর থেকে পয়সা নিয়ে সকলের দেওয়ালই লিখি। দিনে হাজার টাকা।

এক কালে কংগ্রেসের হয়ে একাধিক নির্বাচন লড়া ষষ্ঠীভূষণ পাল বলেন, “আমি ছয়ের দশক থেকে ভোট করছি। তখন ভুষোকালি আর লাল রঙ দিয়ে দেওয়া সামান্য কিছু দেওয়াল লেখা হতো। কখনও খবরের কাগজে আলতা দিয়ে কিছু লেখা হত। খেজুর ছড়া দিয়ে হতো তুলি। দলীয় কর্মীরা নিজেরা তাগিদ থেকে দেওয়া লিখত। এমন মুড়িমুড়কির মতো পয়সা উড়িয়ে প্রচারের কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। এখন সবই বদলে গিয়েছে।”

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Wall Artists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy