Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মেডিক্যালে মেডিসিন ওয়ার্ড

ঘুলঘুলি গলে পড়ে মৃত রোগী

তিন তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর। মৃতের নাম মানিক মুসাহার (৪৪)। তাঁর বাড়ি বহরমপুর লাগোয়া কৃষ্ণমাটি এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা।

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

তিন তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর। মৃতের নাম মানিক মুসাহার (৪৪)। তাঁর বাড়ি বহরমপুর লাগোয়া কৃষ্ণমাটি এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘ দিন ধরে নানা রকম অসুখে ভুগছিলেন মানিক। বছর দেড়েক আগে তাঁর যক্ষাও ধরা পড়ে। মানসিক অবসাদ থেকেই তিনি শৌচাগারের ‘স্কাই লাইট’ গলে নীচে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আয়ার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মানিককে। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। মানিকের স্ত্রী কমলা মুসাহারের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকেই তাঁকে শয্যায় রাখা যাচ্ছে না বলে আয়া আমার কাছে অভিযোগ জানান। এ দিন সকালেও তাঁকে ফোন করেও আয়া ওই একই কথা বলেন।

কমলার কথায়, ‘‘আমার স্বামী কোথায় আছে জানতে চাইলে ওই আয়া বলে, ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’। ওই কথা শুনে আমি তড়িঘড়ি হাসপাতালে চলে আসি। তারপরেই জানতে পারি, আমার স্বামী তিন তলায় মেডিসিন বিভাগের শৌচাগারের জানলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছে।’’

গত প্রায় সাত বছর ধরে অসুস্থতার কারণে মানিক কোনও কাজ করতে পারতেন না। বছর দেড়েক আগে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই শয্যাশায়ী ছিলেন। এমন অবস্থায় বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সংসার সামলানোর পাশাপাশি দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ ও স্বামীর চিকিৎসা খরচ চালাতেন কমলাদেবী। তিনি জানান, এই নিয়ে তিন বার মানিককে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হয়। যক্ষা রোগের ওষুধ খেতে খেতে বন্ধ করে দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সোমবার বিকেলে জরুরি বিভাগে দেখানোর পরে তাঁকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

কমলার অভিযোগ, নিয়মিত টাকা দেওয়া সত্ত্বেও আয়া রোগীর ঠিক মতো দেখভাল করত না। সেই কারণেই এমন ঘটনা। আয়ার পাশাপাশি নার্সদেরও উচিত ছিল আলাদা ভাবে ওই রোগীর যত্ন নেওয়া। কিন্তু নার্সরাও গুরুত্ব দেয়নি। কমলা বলছেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকলে সকলের নজর এড়িয়ে শৌচাগারের মধ্যে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে জানলা গলে নীচে ঝাঁপ দিতে পারত না।’’

হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল জানান, এ দিন সকাল সোয়া দশটা থেকে ওই রোগীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক সময়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া অনেক রোগী শয্যা থেকে নীচে নেমে চলে যায়। ফলে ওই রোগীর ক্ষেত্রে সেই রকমই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। রোগীর বাড়ির লোকজন এখন আয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই রোগী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেছিলেন চিকিৎসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ventilator Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE