Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাগ্যচন্দ্র স্মরণে মিশে গেল নবদ্বীপ-মণিপুর

যদিও মণিপুরের সঙ্গে বঙ্গদেশের যোগসূত্রটি বহু প্রাচীন। মণিপুরে বৈষ্ণব ধর্মমত প্রচারের কাজটি শুরু করেছিলেন নরোত্তম দাস ঠাকুর। খেতুরি মহোৎসব পরবর্তী সময়ে। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের হাত ধরে সেই সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়।

আরাধনা: নবদ্বীপে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আরাধনা: নবদ্বীপে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

চৈতন্যধাম নবদ্বীপের সঙ্গে মণিপুরকে এক সুতোয় বেঁধেছিলেন মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র। সময়টা ১৭৯৮। পরম বৈষ্ণব মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র রাজকুমারী বিম্বাবতীকে সঙ্গে নিয়ে নবদ্বীপে প্রতিষ্ঠা করলেন অনু মহাপ্রভুর বিগ্রহ। নদিয়ার সিংহাসনে তখন মহারাজ ঈশ্বরচন্দ্র। ১৭৯৪ সালে নবদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে গঙ্গার ধারে গড়ে উঠেছে মণিপুরের তীর্থযাত্রীদের জন্য যাত্রীনিবাস। স্থাপিত হয়েছে রাধারমণ বিগ্রহ।

যদিও মণিপুরের সঙ্গে বঙ্গদেশের যোগসূত্রটি বহু প্রাচীন। মণিপুরে বৈষ্ণব ধর্মমত প্রচারের কাজটি শুরু করেছিলেন নরোত্তম দাস ঠাকুর। খেতুরি মহোৎসব পরবর্তী সময়ে। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের হাত ধরে সেই সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। তখন নবদ্বীপে প্রকাশ্যে মহাপ্রভু সেবাপুজো একরকম নিষিদ্ধ ছিল। মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র মহাপ্রভুর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে মহাসমারোহে মহাপ্রভুর সেবাপুজো শুরু করেন। মণিপুররাজকে সে সময়ে ব্রিটিশরাও সমীহ করত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ তাঁকে ‘রাজর্ষি’ সম্মানে ভূষিত করে।

এরপর নবদ্বীপে একে একে গড়ে ওঠে মণিপুর রাজবাড়ি, অনু মহাপ্রভুর মন্দির। নবদ্বীপে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পরে মাত্র কয়েক মাস জীবিত ছিলেন মহারাজ। মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে ছিল তাঁর গুরুপাট। ১৭৯৯ সালে সেখানেই প্রয়াত হন মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র। মণিপুর রাজবাড়ির এমন ইতিহাস বলছিলেন গবেষক প্রবীর ভট্টাচার্য। উপলক্ষ ভাগ্যচন্দ্রের তিরোধান স্মরণ অনুষ্ঠান।

তাঁর তিরোধান তিথিকে ঘিরে নবদ্বীপ মণিপুর রাজবাড়িতে চার দিনের স্মরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছর রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্রের তিরোভাবের ২১৯তম বর্ষ। শ্রীশ্রী অনুমহাপ্রভু সেবায়েত সমিতির আয়োজনে ওই স্মরণ উৎসবে যোগ দিতে নবদ্বীপে উপস্থিত হয়েছে মণিপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব-সহ কয়েকশো মানুষ।

গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মণিপুরের উপ মুখ্যমন্ত্রী য়ুম্নান জয়কুমার সিংহ। সেবা সমিতির সাধারন সম্পাদক রাজকুমার টিকেন্দ্রজিৎ সিংহ জানান, “স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মণিপুরের সাংস্কৃতিক জগতের দিকপাল শিল্পীরা।” চার দিনের রাজকীয় অনুষ্ঠানে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দশ লক্ষ টাকা। প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অনু মহাপ্রভুর আড়াইশো বছরের নাটমন্দিরে চলছে নাচ, গান, কীর্তন ও আলোচনা সভা। নাট্যব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম বলেন, “মণিপুরের মানুষের কাছে শিকড়ে ফেরার ডাক। দিনের পর দিন এই অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।” রাজবাড়ির নাটমন্দিরে ‘চৌবা’ রাগাশ্রিত মণিপুরি ‘নট সংকীর্তন’ কিংবা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র ও রাজকুমারী বিম্ববতী দেবীর যৌথ প্রয়াসে সৃষ্ট মণিপুরি রাসনৃত্যে বুঁদ হয়ে আছে নবদ্বীপের মণিপুর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE