অনুর্ধ্ব ১৪ ফুটবল দল নিয়ে বহরমপুরে হাজির মণিপুরের ফুটবল দল। — নিজস্ব চিত্র।
খাতায়কলমে দূরত্ব ১,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু বাস্তবে যেন কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। মণিপুর থেকে বহরমপুর— এতটা পথ পেরিয়ে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নবাবের দেশ মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে হাজির মণিপুর জুনিয়র দলের ফুটবলাররা। দুই গোলপোস্টের মাঝে পায়ে পায়ে লেখা হচ্ছে অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। গোলা-বারুদ, অনবরত হিংসা আর তাজা লাশের ভিড় পেরিয়ে শান্তির সম্ভাবনার কাহিনি শোনাচ্ছে ওরা। রূপকথা কি একেই বলে?
হিংসা, অশান্তি আর এক বুক আশঙ্কাকে সঙ্গী করে ফুটবলে নতুন লড়াইয়ের গল্প বুকে বেঁধে বহরমপুরে হাজির মণিপুরের জুনিয়র ফুটবলাররা। হাজার প্রতিকূলতাকে ড্রিবল করে বল পায়ে মাঠে নামা। বহরমপুরে খেলতে এসেছে অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবল দল। তবে সহজ ছিল না অশান্ত গ্রাম থেকে শিশুদের ভিন রাজ্যে খেলতে আনা। সেই গল্পই শোনালেন অনূর্ধ্ব ১৪ মনিপুর ফুটবল দলের কোচ ও ম্যানেজার। কার্যত অসাধ্যসাধন করে ‘সাব জুনিয়র ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৪’ খেলতে ম্যানেজার ও কোচ-সহ ২২ জন ফুটবলার নিয়ে ইম্ফল থেকে বহরমপুর এসে পৌঁছেছে মণিপুরের অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবল দল। লক্ষ্য একটাই, জয়।
জ্বলছে জন্মভূমি মণিপুর, প্রতি দিন ভাঙছে হাজারও স্বপ্ন। নিত্য দিন নিয়ম করে নতুন করে জ্বলে উঠছে হিংসার আগুন। আশ্রয়হীন হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কোল খালি হচ্ছে শত শত মায়ের। তবুও এরই মাঝে জারি নতুন স্বপ্নের খোঁজ। প্রথম রাউন্ডে গোয়া ও পশ্চিমবঙ্গকে হেলায় উড়িয়ে ইতিমধ্যেই সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে হিংসাদীর্ণ মণিপুরের ছোটরা। এ বার পাখির চোখ, সেমিফাইনাল বাধা পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছনো। চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের মধ্যে সেরার শিরোপা জিতে দেশবাসীকে অন্য এক বার্তা দিতে চান দলের খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার। কোচের দাবি, সাধারণ মণিপুরের সাধারণ মানুষ অশান্তি, দাঙ্গা চায় না। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে জয়টা যে ভীষণ প্রয়োজন। পাশাপাশি, অশান্তি সৃষ্টিকারীদের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে সরে আসার অনুরোধও জানালেন মণিপুর ফুটবল দলের ম্যানেজার।
মণিপুর জুনিয়র ফুটবল দলের কোচ মৈরাংথেম দেবেন সিংহ বলেন, ‘‘মণিপুরের সাধারণ মানুষ কেউ হিংসা চান না। রাজনৈতিক স্বার্থে তাঁদের মাথায় হিংসার বীজ বুনে দেওয়া হয়েছে। ফুটবলই পারে মানসিকতার বদল ঘটাতে। তাই এই জয় অত্যন্ত জরুরি।’’ ফুটবল দলের ম্যানেজার মুতুম্ব তম্বি মাচা সিংহ বলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফি নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে চিৎকার করে বলতে চাই, এই দেখ, তোমাদের ছেলেদের ভবিষ্যৎ! সিদ্ধান্ত না-ও তোমরা কী চাও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ না কি হিংসা?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy