ওইখানে ছিল আমাদের বাড়ি...। শমসেরগঞ্জে। ছবি: জীবন সরকার
ধানঘড়া, শিবপুরের পর আগ্রাসী গঙ্গার আক্রোশ এ বার আছড়ে পড়েছে ধুসরিপাড়ার ঘাটে। নদীর জলোচ্ছ্বাস আর তারই ধাক্কায় ভিটেহারা মানুষের স্রোত। ফরাক্কার কোল ঘেঁষে গঙ্গার কোলে একের পর এক ভাঙন-আতঙ্কিত গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চোখে-মুখে একটাই প্রশ্ন— এ বার আমরা যাব কোথায়!
গত দু’সপ্তাহ ধরে ওই এলাকা জুড়ে গঙ্গা যেন আদিম উচ্ছ্বাসে ভাঙনের খেলায় মেতেছে। যা দেখে অসহায় ভাবে নদীর পাড়ে ক্রমাগত বালির বস্তা ফেলে চলেছে সেচ দফতর। আর নিমেষে তা তলিয়ে যাচ্ছে নদীর খোলে।
বন্ধ স্কুলের বারান্দা, আমবাগানের ছায়া কিংবা পড়শি গ্রামের পরিজনের কাছে আশ্রয় পেয়েছেন কয়েকজন। বাকি পরিবারগুলি ভোর থেকে সদলে হাজির হওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছে একটাই প্রশ্ন রাখছেন— পুজোর মুখে আমরা যাব কোথায় বলুন তো! যা শুনে রাজনৈতিক খেলা, সারশূন্য আশ্বাস কিংবা শাসক দলের দিকে তোপ ছুঁড়ে দেওয়া, চলছে সবই। কিন্তু কাজের কাজ কতটা হচ্ছে তা ছাদহীন পরিবারগুলির মুখের কথাতেই স্পষ্ট।
ধানঘড়ার ৬৫ বছরের সাদেমান আলি বলছেন, ‘‘সকলেই ‘ঘর দেব’ বলে পুনর্বাসনের আশ্বাস ঝুলিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ বা দিল্লি কেউ বা নবান্নের দিকে তোপ দেগে বলছেন, সব দোষ ওদেরই! কিন্তু এ সব না করে, এই ঘর-হারা মানুষগুলোর জন্য একটু ভিটের চেষ্টা সকলে মিলে করলেও তো পারত, এই সময়ে রাজনীতি করাটা কি খুব জরুরি!’’
আর রাজনীতির কারবারিরা সামনে প্রতিশ্রুতি দিলেও পিছন ফিরেই পারস্পারিক দোষারোপের খেলায় মাতছেন। বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এলাকা ঘুরে যেমন গাড়িতে ওঠার আগে জানিয়ে গেলেন, ‘‘ভিটে হারানো পরিবারগুলির পুনর্বাসনের দায় রাজ্য সরকারের।’’ তৃণমূলের সাংসদ খলিলুর রহমান দুষলেন ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে। বলে গেলেন, ‘‘ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের জন্যই এউ ভাঙন, পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই।’’
যা শুনে স্থানীয় স্কুলের প্রধানশিক্ষক পীযূষকান্তি পাল বলছেন, ‘‘পুনর্বাসনের দায় কার তা নিয়ে আকচাআকচি না করাই ভাল। আমরা অবশ্য স্কুলের শিক্ষকদের ডেকে চেয়ার-টেবিল সরিয়ে মানুষগুলোকে দিন কয়েকের থাকার ব্যবস্থা করছি। তবে তা তো পাকাপাকি কোনও ব্যবস্থা নয়। দু’দিন পরেই তো স্কুল খুলবে, তখন!’’
তিন গ্রামের অন্তত ৩১০টি পরিবার ঘর হারিয়ে ত্রিপলের নীচে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ বা পড়শি গাঁয়ে আত্মীয় পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তা কতদিন? জমির খোঁজে গত ক’দিন থেকেই লেগে রয়েছেন নিমতিতার পঞ্চায়েত প্রধান সিউটি হালদার। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি খাস জমি এলাকায় নেই। ফিডার ক্যানালের পাশে এবং চাঁদপুরে কিছু জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে কেউ যেতে চাইছেন না।’’
শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘৩১০টি পরিবার আছে ভিটে হারিয়েছে। তাঁদের প্রথম তালিকা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপাতত কোনও সরকারি জমি এলাকায় নেই। এতগুলো পরিবারের পুনর্বাসন দিতে অন্তত ৫ একর জমি লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy