Advertisement
E-Paper

এখন সুতির ঘরে-ঘরে নাজমা খাতুন

কখনও পড়শির ফোনে খবর পেয়ে ছুটে এসেছে পুলিশ, কখনও আবার ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’র সেই সব অকুতোভয় পড়ুয়ারা ঝাঁপিয়ে পড়ে থমকে দিয়েছে তার পাশে বসে থাকা সহপাঠীর বিয়ে। নাবালিকা বিয়ে রুখে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে পিছিয়ে পড়া মুর্শিদাবাদ।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ১২:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কখনও পড়শির ফোনে খবর পেয়ে ছুটে এসেছে পুলিশ, কখনও আবার ‘কন্যাশ্রী যোদ্ধা’র সেই সব অকুতোভয় পড়ুয়ারা ঝাঁপিয়ে পড়ে থমকে দিয়েছে তার পাশে বসে থাকা সহপাঠীর বিয়ে।

নাবালিকা বিয়ে রুখে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে পিছিয়ে পড়া মুর্শিদাবাদ। আর সেই কঠিণ কাজটা প্রায় নিয়ম মেনে করে চলেছে নিতান্তই আটপৌরে এক প্রান্তিক এলাকা, সুতি।

নাবালিকা বিয়ে বন্ধের প্রায় আঁতুরঘর হয়ে ওঠা সুতিতে, সরকারি হিসেব বলছে, গত আঠারো মাসে থমকে দেওয়া গিয়েছে অন্তত ৮৪টি বিয়ে। আর, উৎসাহ পেয়ে ব্লক প্রশাসন তাই শনিবার ঘোষণা করেছে— স্বাস্থ্য এবং পঞ্চায়েতের সমন্বয় সভাতেও এ বিষয়টি নিয়ে যেন সব সময় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের কাছে বাল্য বিবাহ বন্ধের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সে ভাবে না থাকলেও সংখ্যাটা যে বছরে শ’তিনেকের বেশি তা মানছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক সমনজিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘জেলার মধ্যে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে সুতি ব্লক।’’

২০১৬ সালে সুতি ব্লকে নাবালিকা বিয়ে আটকান হয়েছে ৬০টি। সুতি এক ব্লকে সংখ্যাটি ১৩। এ বছরের গত ৫ মাসে দুই ব্লকে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার সংখ্যা ১১।

সুতি ২ ব্লকের বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য বলছেন, “সংখ্যাটা কমছে মানে সচেতনতা বাড়ছে। আর সচেতনতা বাড়ার কারণ, গ্রামে গ্রামে শিশু সুরক্ষা কমিটির সক্রিয়তা বাড়ানো গিয়েছে।” সুতি ২ ব্লকে এ পর্যন্ত ১৫৭টি গ্রামে এবং সুতি ১ ব্লকের ১২৬টি গ্রামে এই কমিটি গড়ে কাজ শুরু হয়েছে।

জেলায় কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জেলা কোঅর্ডিনেটর জয়ন্ত চৌধুরী বলছেন, “জেলার মধ্যে দুটি ব্লকই আর্থ সামাজিক ও শিক্ষা দুই ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। এক সময় নাবালিকা বিয়ে যে আইন বিরুদ্ধ এই বোধটাই ছিল না। তাই প্রথম থেকেই জেলা প্রশাসনের নজরে ছিল সুতি। গত দেড় বছরের সাফল্যও মিলেছে।”

ওই সংস্থার পক্ষে স্বীকার করা হয়েছে এ ব্যাপারে কন্যাশ্রী যোদ্ধা হয়ে শিশু সুরক্ষা বাহিনী সব চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

তেমনই এক যোদ্ধা সেলিমপুরের নাজমা খাতুন। একদিকে বাবা, মা, দাদু, ঠাকুমা-সহ গোটা পরিবার। অন্য দিকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নাজমা। বিয়ের তোড়জোড় হতেই রুখে দাঁড়িয়েছিল সে।

টানা তিন সপ্তাহ ধরে মা-বাবা-পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে লড়ে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ঠিক তখনই এক দিন সরাসরি সুতি থানায় হাজির হয়ে নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সে। বিয়ে বন্ধর সেই রোল মডেল নিজের গ্রামেই দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়েও রুখে দিয়েছিল।

তবে, এখন আর নাজমা একা নয়, সমনজিত বলছেন, ‘‘সুতি জুড়ে এখন ঘরে ঘরে নাজমা!’’

Child marriage school student protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy