Advertisement
E-Paper

মেরু ধৃত, আঙুল পুলিশের দিকেও   

সংবাদমাধ্যমে নড়াচড়া শুরু হতেই নদিয়ায় গাঁজা কারবারের অন্যতম পান্ডা মিলন চাকী ওরফে মেরুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও এত দিন তা অবাধে চলতে দেওয়া হচ্ছিল কেন, পুলিশ বা আবগারি দফতরের কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। শঙ্কর পাল নামে আর এক গাঁজা কারবারি হাওয়া বুঝে বেপাত্তা।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০২:০৩
 কৃষ্ণনগর আদালতে মেরু। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

কৃষ্ণনগর আদালতে মেরু। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ

একেই বুঝি বলে, ঠেলার নাম বাবাজি!

সংবাদমাধ্যমে নড়াচড়া শুরু হতেই নদিয়ায় গাঁজা কারবারের অন্যতম পান্ডা মিলন চাকী ওরফে মেরুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও এত দিন তা অবাধে চলতে দেওয়া হচ্ছিল কেন, পুলিশ বা আবগারি দফতরের কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। শঙ্কর পাল নামে আর এক গাঁজা কারবারি হাওয়া বুঝে বেপাত্তা।

বুধবার ভোরে এই প্রতিবেদক হরিণঘাটার মহাদেবপুর গ্রামে গিয়ে মেরু ও শঙ্কর নামে দুই গাঁজা কারবারির সঙ্গে দেখা করে। ওই দু’জন আশপাশের বেশ কয়েকটি থানা এবং একাধিক জেলার গাঁজার জোগানদার বলে অভিযোগ ছিল। গোপনে তাঁদের গাঁজা বিক্রির ছবিও তোলা হয়। কী করে এ সব চলছে, হরিণঘাটা থানার কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর পরেই মাঝরাতে ‘নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোপ্যাথিক সাবস্ট্যান্স’ আইনে মেরুকে গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করানো হলে মেরুকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। গোটা চক্র ছড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন পুলিশ তাঁকে নিজের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চাইল না? হরিণঘাটা থানা সূত্রের দাবি, তার কাছ থেকে যা জানার ছিল, সবটাই জানা গিয়েছে। তাঁর কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ কেজি গাঁজা উদ্ধারও হয়েছে। তাই পুলিশ হেফাজতে চাওয়া হয়নি।

আগের দিনই জানা গিয়েছিল, কোচবিহার থেকে বস্তায় গাঁজা এনে নদিয়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার খদ্দেরদের কাছে বিক্রি করতেন মেরু। এলাকার মানুষের প্রশ্ন, দিনের পর দিন কী করে অবাধে কারবার চালিয়ে গেলেন তিনি? কী ভাবে নাইট সার্ভিস বাস থেকে বিরহী বা জাগুলিতে বস্তা নামিয়ে মোটরবাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও দিনের পর দিন তা পুলিশের নজর এড়াল? প্রায়ই রাতে মেরুর বাড়িতে গাড়ি ঢুকত। মাঝরাতে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে এসে অটোয় করে কয়েক কিলোগ্রাম গাঁজা নিয়ে যেতেন এক জন। এলাকার মানুষ টের পেতেন, অথচ পুলিশ পেত না?

এলাকার একটি সূত্রের দাবি, শঙ্কর ও মেরু দুজনেই পুলিশ-প্রশাসনের প্রভাবশালী মহলের একাংশের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলতেন। লোকের মুখ বন্ধ রাখতে নিজেদের এলাকাতেও তাঁরা টাকা ছড়াতেন। কেউ চাঁদা চাইতে এলে সঙ্গে-সঙ্গে আট-দশ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া মেরুর অভ্যাস ছিল।

বুধবার ভোরে নিজের বাড়ি থেকে গাঁজা বিক্রি করতে-করতে শঙ্কর দাবি করেন, এ সব করতে গেলে সব রকম ‘সেটিং’ থাকতে হয়। কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে মুশকিল। এর আগে পুলিশের সঙ্গে ‘সেটিং’ ঘেঁটে যাওয়ায় ভৈরবী সরকার ওরফে কালীমাসির কারবার শুধু লাটে ওঠেনি, গ্রেফতার হয়ে তিনি আপাতত শ্রীঘরে বলেও জানায় শঙ্কর।

জানতে চাওয়া হয়, ‘‘শঙ্কর কাকা, তুমি কী করে ব্যবসা করছ?’’ শঙ্কর দাবি করেন, ‘‘আমি হরিণঘাটা থানায় মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিই। কল্যাণীর আবগারি দফতরেও মাসে তিন হাজার টাকা করে দিই।’’ চাকদহ আর কৃষ্ণনগর, এমনকি কলকাতার বাগুইআটিতেও তিনি টাকা পাঠান বলে দাবি করেন শঙ্কর। তবে ওই তিন জায়গায় পুলিশ, আবগারি দফতর বা অন্য কাকে টাকা দেন তা তিনি খোলসা করেননি। বুধবার সকালে মহাদেবপুর থেকে কল্যাণীতে ফিরে মেরুকে ফোন করা হলে তিনিও খোলাখুলি দাবি করেন, ‘‘হরিণঘাটা থানায় প্রতি মাসে টাকা দিই। আবগারি দফতরেও দিই।’’ তবে আবগারি দফতরের প্রতি অভিমানও ছিল তাঁর গলায়। মেরুর অভিযোগ, ‘‘এক বার আবগারি দফতরের এক ছোটবাবু কল্যাণীতে ডেকে আমার কাছ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নেয়। এখন কল্যাণীর নাম শুনলেই ভয় লাগে।’’ তবে সেই ‘ছোটবাবু’র নাম মেরু জানাননি।

বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ফোনে মেরুই জানিয়েছিলেন, হরিণঘাটা থানা তাঁকে আপাতত ব্যবসা বন্ধ করতে বলেছে। আসলে ভোরে কারা গ্রামে গিয়েছিল, সেই খবর পুলিশের কেউ-কেউ পেয়ে গিয়েছিলেন। মেরুর এক প্রতিবেশীর কটাক্ষ, ‘‘এর পরেও কিন্তু মেরুকে ধরতে পুলিশ মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। আসলে সময় দিয়েছে যাতে সে বেশির ভাগ মাল সরিয়ে ফেলতে পারে!’’ সেই কারণেই মাত্র সাড়ে পাঁচ কেজি গাঁজা ‘উদ্ধার’ হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

নদিয়ার হরিণঘাটা থানার আইসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় বেশি দিন হল আসেননি। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘যা বলার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ পুলিশের ঘুষ নিয়ে গাঁজা কারবারিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ বা দাবি প্রসঙ্গে নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ নেই। গাঁজা ধরতে সর্বত্র যথেষ্ট নজরদারি চলে।’’

আর, আবগারি দফতরের ডেপুটি এক্সাইজ় কালেক্টর উত্তম সাহার দাবি, ‘‘মেরু আর শঙ্কর, এই দুটো লোকের নাম জীবনে প্রথম বার শুনছি! দফতরে অন্য কারও জানা ছিল কি না, খোঁজ নিতে হবে।’’

নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘যা অভিযোগ উঠছে, তা সত্যি হলে সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে। এটা চলতে দেওয়া যায় না। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও কথা বলব।’’

Crime Arrest Marijuana Dealer Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy