Advertisement
E-Paper

বাইশ গজের মেয়েরা

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মেয়েদের দল ফাইনালে উঠতেই খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন উইকেটকিপার তথা ব্যাটসম্যান তানিয়া দত্ত। তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী। ইদানীং খুব ভক্ত হয়েছেন ক্যাপ্টেন মিতালি রাজের।

সৌমিত্র সিকদার ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৪
মাঠ-শাসন: ব্যাট হাতে ক্রিজে। নিজস্ব চিত্র

মাঠ-শাসন: ব্যাট হাতে ক্রিজে। নিজস্ব চিত্র

খেলছে সচিন খেলছে সচিন/ মারছে সচিন ছয়...

‘সচিন’ নামের বদলে শুধু ‘ঝুলন’ বা ‘মিতালি’ বসিয়ে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার ডার্বিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৭১ করার পরে ‘হ্যারি’ও (হরমনপ্রীত কওর কে ওই নামেই ডাকে মাঠ) বসিয়ে দিচ্ছে ওরা কেউ-কেউ।

ওরা নদিয়ার পম্পা, রূপা, মিতা, ঝুম্পা, অর্পিতা। ওরা মুর্শিদাবাদের তানিয়া, রুকসানা, কাজল, অনন্যা। ওদের কারও হাতে ব্যাট, কারও বল। ওরা সকলেই বাইশ গজের মেয়ে।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মেয়েদের দল ফাইনালে উঠতেই খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন উইকেটকিপার তথা ব্যাটসম্যান তানিয়া দত্ত। তাঁর প্রিয় ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী। ইদানীং খুব ভক্ত হয়েছেন ক্যাপ্টেন মিতালি রাজের। তাঁর মনে পড়ে, ‘‘কলকাতায় একটা প্রীতি ম্যাচের শেষে ঝুলন গোস্বামীকে মুখোমুখি দেখে, তাঁর সঙ্গে কথা বলে বাড়ি ফিরে উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমোতেই পারিনি!’’

বাদকুল্লার মাঠে ফি সপ্তাহে সোম, বুধ আর শুক্রবার প্রশিক্ষণ নিতে আসেন নদিয়ার নানা প্রান্তের ৩৫ জন মেয়ে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত জেলা দলের প্র্যাকটিস চলে। এঁদের কারও বাড়ি কৃষ্ণনগর, কেউ আসেন বেথুয়াডহরি বা চাকদহ থেকে। পিঠে ভারী কিট, চোখে-মুখে উৎসাহ। এই মেয়েদেরই মধ্যে ১৪ জনকে নিয়ে গড়া জেলা দল গত মার্চে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফাইনালে উত্তর ২৪ পরগনার দলকে হারিয়ে। ঝুলন চাকদহেরই মেয়ে। কাজেই এদের প্রায় সকলেরই ‘রোল মডেল’ ঝুলনদি। কৃষ্ণনগর কালীর হাটের পম্পা সরকার বলেন, “ঝুলন গোস্বামী আমাদের স্বপ্ন। আমরা চাই, দিদির মতো ভাল খেলতে, দেশের হয়ে খেলতে।”

বহরমপুর এফইউসি ক্লাব ময়দানে প্র্যাকটিস করে মুর্শিদাবাদ জেলা দল। মেয়েরা কেউ-কেউ বহরমপুরেরই। কিন্তু অনেকেই আসেন লালবাগ, সাগরদিঘি, ডোমকল বা বেলডাঙা থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনন্যা হালদার আর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুকসানা খাতুন দমদমে মেসভাড়া করে থাকেন। কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কের রাইজিং স্টার স্পোর্টস ক্লাবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেন তাঁরা। ক্লাবের হয়ে ম্যাচও খেলেন।

আপাতত ওঁরা সকলেই মুখিয়ে আছেন রবিবার বিকেলের জন্য— যখন নীল জার্সির ঝাঁক রে-রে করে নেমে পড়বে লর্ডসের সবুজে। চ্যালেঞ্জটা সহজ নয়। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে দু’ধাপ উপরে, দু’নম্বরে থাকা ইংলন্ডের মুখোমুখি হতে হবে তাদের ঘরের মাঠেই। তা বলে ভয়ে কুঁকড়ে নেই কেউই। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন ঝুলনেরা। তাঁদের নিয়ে স্বপ্ন তো দেখাই যায়!

বহরমপুরের খাগড়ার বাসিন্দা অন্বেষা দাস সামনের বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। কলকাতায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েও টাকার অভাবে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। তার আক্ষেপ, ‘‘জেলা দলের খেলা না থাকলে নিয়ম করে অনুশীলন হয় না। বাধ্য হয়ে আমরা তিনটি মেয়ে ছেলেদের সঙ্গে অনুশীলন করি।’’ তিনিও চান ঝুলন গোস্বামী হতে। কাজল প্রামাণিক ঝুলন হয়েই পাড়াপড়শি-পরিজনদের একাংশের টিপ্পনীর জবাব দিতে চান।

২০১৩ সালে ঝুলনকে সামনে পেয়ে মিডিয়াম পেস বোলিং শেখার আব্দার জুড়েছিলেন ছোটখাটো চেহারার অনন্যা বণিক। ঝুলন ফেরাননি। ‘‘দিদির থেকেই শিখেছি, কী করে বলে আগুন ঝরাতে হয়’’— হাসেন অনন্যা।

ওঁরা সকলেই রুদ্ধশ্বাসে প্রহর গুনছেন। এ যে তাঁদের নিজেদেরই হারা-জেতার লড়াই!

Cricketers Women Cricketers Cricket পম্পা তানিয়া দত্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy