Advertisement
E-Paper

দ্বন্দ্ব এড়াতে চেনা মুখেরই প্রাধান্য তৃণমূলে

বাইরের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ঘরের দ্বন্দ্ব ভুলল তৃণমূল। গয়েশপুর, হরিণঘাটা, কল্যাণীতে মুকুল রায় ও তাঁর অনুগামীরা যে রীতিমতো বেগ দেবে দলকে, তা প্রায় নিশ্চিত। তাই তাহেরপুর বাদ দিয়ে বাকি সাতটি পুরসভায় মোট ১৪০টি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলল তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, ১৩৫টি আসনেই প্রার্থী নির্ধারণ হয়েছে সহমতের ভিত্তিতে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০২:২৫

বাইরের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ঘরের দ্বন্দ্ব ভুলল তৃণমূল। গয়েশপুর, হরিণঘাটা, কল্যাণীতে মুকুল রায় ও তাঁর অনুগামীরা যে রীতিমতো বেগ দেবে দলকে, তা প্রায় নিশ্চিত। তাই তাহেরপুর বাদ দিয়ে বাকি সাতটি পুরসভায় মোট ১৪০টি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলল তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, ১৩৫টি আসনেই প্রার্থী নির্ধারণ হয়েছে সহমতের ভিত্তিতে। বাকি পাঁচটি আসনে একাধিক নাম শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়ায় জেলা নেতৃত্ব প্রার্থী চূড়ান্ত করার ভার ছেড়ে দিয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বের উপর। বুধবার তৃণমূল ভবনের বৈঠকে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই পাঁচটি আসনেও প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেন। কেবল তাহেরপুর পুরসভার আসন সংখ্যা নিয়ে এখন সিদ্ধান্ত না হওয়ায়, প্রার্থী তালিকা এখনও স্থির হয়নি।

কী করে এমন ঐকমত্য সম্ভব হল তৃণমূলে? গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু আসনে একাধিক পঞ্চায়েত প্রার্থী টিকিট পেতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তালিকা চূড়ান্ত করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল তৃণমূলকে। তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি, বহু জায়গায় গোঁজ প্রার্থী দিয়েছিল বিক্ষুব্ধরা। এমনকী সম্প্রতি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনেও প্রার্থীপদ নিয়ে তৃণমূলের গৃহদ্বন্দ্ব চলে এসেছিল প্রকাশ্যে। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে প্রয়াত বিধায়ক সুশীল বিশ্বাসের মেয়ে সুনয়না ঘোষ বিশ্বাস যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। টিকিট না পেয়ে জেলা তৃণমূল কমিটির সম্পাদক বিধান পোদ্দার সংবাদমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রার্থীপদ নিয়ে বিধান পোদ্দার ও সত্যজিৎ বিশ্বাসের টানাপড়েনে রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে এসেছিল।

তার মাস দুয়েকের মধ্যে ১৪০টি আসনের ১৩৫টিতেই কী করে ঐকমত্য তৈরি হয়ে গেল?

প্রশ্ন করলে জেলার নেতারা প্রার্থী বাছাইয়ের পরিচিত ফর্মুলা শোনাচ্ছেন। যেখানে নির্বাচন, সেই সব পুর এলাকার বিধায়ক, সাংসদ, পুরপ্রধান ও শহর সভাপতিকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল কমিটি। তাঁরা এলাকার অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা তৈরি করে তা দিয়েছেন জেলা সভাপতিকে। যে যে আসনে সহমতে আসা যায়নি, সেগুলির ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থীর নাম-সহ গোটা তালিকা রাজ্য নেতৃত্বকে অনুমোদনের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এ ভাবেই বড় গণ্ডগোল ছাড়া প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু ঘটনা হল, এই ফর্মুলা সব জেলায়, সব নির্বাচনেই অনুসরণ করা হয়। তা সত্ত্বেও গোলমাল চাপা থাকে না। এ বার তা হলে আলাদা কী হল?

জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে একটা কারণ স্পষ্ট হচ্ছে। তা হল, কোন্দল এড়াতে বর্তমান কাউন্সিলরদেরই অগ্রাধিকার দিয়েছে দল। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘কোনও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ না থাকলে, বা সেই আসন সংরক্ষিত না হয়ে গেলে, আমরা তাঁকেই ফের প্রার্থী করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছি।” সংরক্ষিত আসনেও একের সঙ্গে অন্যের পাল্টাপাল্টি করে আগের মুখই ধরে রাখা হয়েছে। এ ভাবে স্থিতাবস্থা বজায় রেখে ঘরোয়া শান্তি ধরে রেখেছে তৃণমূল। ওই নেতার মতে, এ বারে যাঁরা ভোটে দাঁড়াবেন তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরনো মুখ- যাঁরা গতবার জিতেছিলেন, বা অতি অল্প ভোটে হেরেছিলেন। সংরক্ষণের জন্য অথবা আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য যেখানে বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠ বা আত্মীয়কে প্রার্থী করা হয়েছে। নতুন মুখ নেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি দল, বলছেন দলের নেতারাই।

সেই সঙ্গে, জেলাস্তরে প্রায় অপরিচিত সত্যজিৎ বিশ্বাসকে বিপুল ভোটে জয়ী করে এনে জেলা সভাপতি গৌরীবাবু যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তাকে দলের অনেকেই ‘মডেল’ বলে মনে করছেন। তার ছাপ পড়েছে হরিণঘাটায়। এ বারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে হরিণঘাটায়। জেলার এক নেতার কথায়, “কৃষ্ণগঞ্জ উপ-নির্বাচনে আমরা বেশি ওজনদার প্রার্থীর দিকে না ঝুঁকে, বুথ স্তরে সংগঠন করে আসা লোককে প্রার্থী করে বাজিমাত করেছি। পুরভোটেও এমন ব্যক্তিকেই আমরা অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছি।”

কিন্তু কী হবে গয়েশপুর পুরসভাতে? এখানে গতবার ১৭টি আসনেই জয়ী হয় সিপিএম। বরাবরই এই পুরসভায় পিছিয়ে থাকে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘গয়েশপুর এলাকা বরাবরই বধ্যভূমি।” আজকের যিনি জেলা সভাপতি, সেই গৌরীবাবু নিজেই ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে চাকদহ থেকে প্রার্থী হয়ে ৪০টি বুথে মাত্র ৪৯টি ভোট পেয়েছিলেন। তাই এ বারও তৃণমূলের কাছে এই পুরসভা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের।

তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, ‘‘আগে মুকুল নিজে গয়েশপুরে ভোট করতেন। তাঁর অনুগামীদের কাজে লাগিয়েও বিশেষ লাভ হত না। এ বার শুধু মুকুলদা নেই তাই নয়, দিদিকে শিক্ষা দিতে তিনি যে এ বার কার্যত বিরোধিতা করবেন, তা প্রত্যাশিত।’’ রানাঘাটে মমতা যে ভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়েন, তাতে মুকুল অনুগামীরা জড়িত রয়েছেন বলেও দলে সন্দেহ অনেকের। এই পরিস্থিতিতে গয়েশপুর, কল্যাণী ও হরিণঘাটা পুরসভায় কঠিন লড়াই হবে, ঘনিষ্ঠ মহলে তা মানছেন তৃণমূল নেতারা।

অন্য দিকে, জেলা সভাপতি গৌরীবাবু মমতার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দলে সকলেই জানে। ফলে তাঁর সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলেও জেলার কোনও নেতা-মন্ত্রী সহজে তাঁর বিরোধিতা করতে সাহস করছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী তালিকা তৈরিতে প্রায় দৃষ্টান্তমূলক ঐক্যমত তৈরি করতে পেরেছে নদিয়া তৃণমূল।

কিন্তু দলের মধ্যে চ্যালেঞ্জ তো রয়েই যাচ্ছে। মুকুল রায়ের খাসতালুকে গৌরীবাবুর পছন্দের প্রার্থীরা দাগ কাটতে পারবেন কি?

গৌরীবাবুর বক্তব্য, ‘‘হরিণঘাটা, কল্যাণী এলাকায় মিডিয়া এমন হাওয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, কেউ বুঝি এই এলাকার ইজারা নিয়ে বসে আছেন। মনে রাখতে হবে তৃণমূলের কর্মী বা সাধারণ ভোটাররা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চেনেন। অন্য কারও অস্তিত্ব নেই। সেটা তাঁরা এ বারও প্রমাণ করে দেবেন।’’

tmc candidate list municipal election krishnanagar susmit haldar Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy