Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিক্ষে করে শৌচাগার, কুর্নিশ জেলা প্রশাসনের

কথাটা যে কথার কথা নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন মা ও মেয়ে। ইসলামপুরের হড়হড়িয়ার ফজিলা বেওয়া ও তাঁর মেয়ে ফতেমা বেওয়া ভিক্ষে করে দিন গুজরান করেন।

ফতেমা ও ফজিলা।

ফতেমা ও ফজিলা।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

ইচ্ছে থাকলেই শৌচাগার হয়!

কথাটা যে কথার কথা নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন মা ও মেয়ে। ইসলামপুরের হড়হড়িয়ার ফজিলা বেওয়া ও তাঁর মেয়ে ফতেমা বেওয়া ভিক্ষে করে দিন গুজরান করেন। কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, প্রশাসনের কর্তাদের নাগাড়ে শৌচাগার নিয়ে প্রচার করতে দেখে আর চুপ করে থাকতে পারেননি ওই দুই মহিলা। ভিক্ষে করে জমানো টাকায় শৌচালয় গড়লেন তাঁরা।

ফজিলা ও ফতেমা একসঙ্গেই থাকেন। তাঁদের সম্বল বলতে এক কাঠারও কম জমি। সেখানে মাস দশেক আগে সরকারি প্রকল্পে দু’টি ঘর পেয়েছেন। শৌচালয় করার জন্য জমি না থাকায় সেই দু’টি ঘরেই তাঁরা দু’টি শৌচালয় গড়েছেন। মা ও মেয়ের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, “মা ও মেয়ে এ ভাবে ভিক্ষের টাকা দিয়ে শৌচালয় তৈরি করে নজির গড়লেন।” জেলাশাসকের দাবি, ওঁদের অন্য সরকারি প্রকল্পে সাহায্য করা যায় কি না দেখা হবে।

নবাবের জেলাকে নির্মল করতে হবে। তাই বিডিও, ওসি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা হুইসেল নিয়ে মাঠেঘাটে ছুটছেন। জেলাশাসক বাড়ি বাড়ি ঘুরে শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এ জেলায় কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে, কেউ ঋণ নিয়ে, কেউ কন্যাশ্রী প্রকল্পে পাওয়ায় টাকায় শৌচালয় তৈরি করেছেন। দৌলতাবাদের এক বৃদ্ধাও ভিক্ষের টাকায় শৌচালয় তৈরি করেছেন। এ বারে সেই পথেই হাঁটলেন হড়হড়িয়ার মা–মেয়ে।

৭৬ বছরের ফজিলা বেওয়ার স্বামী বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলে অন্যত্র থাকেন। মেয়ে ফাতেমা বেওয়া বছর কুড়ি থেকে মায়ের বাড়িতে থাকেন। এত দিন তাঁদের চালা বাড়ি ছিল। মাস দশেক আগে এক কাঠার কম জায়গায় দু’টি পাকা ঘর তৈরি হয়েছে। সেখানেই থাকেন মা ও মেয়ে। ফজিলা বেওয়া শোওয়ার ঘরের ভিতরে হাজার চারেক টাকা খরচ করে শৌচালয় তৈরি করেছেন। মাস খানেক থেকে তিনি ওই শৌচালয় ব্যবহার করছেন। ফজিলার পাশের ঘরের বারান্দার এক কোণে ফাতেমা বেওয়াও একটি শৌচালয় তৈরি করেছেন।

ফজিলা বলছেন, “প্রশাসন সচেতন করেছে। এ ছাড়া মাঠে ঘাটে যেতে সম্মানে বাধে। আমরা মা-মেয়ে দু’জনেই ভিক্ষে করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সেই টাকায় শৌচালয় তৈরি করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Begger টয়লেট ভিক্ষা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE