Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে দশটা বছর, ফোন করবে ছেলে, মা অপেক্ষায়

টানাপড়েনের দিন গুজরানে এক টুকরো স্বপ্নের মতো উড়ে আসে আরব-দেশের হাতছানি। মোটা টাকা, গাঁয়ের বাড়িতে অচ্ছে দিন ফেরানোর সুবাসে ডানা ভাসিয়ে ওঁরা পাড়ি দেন মরু প্রান্তরে। তার পরে? খোঁজ নিল আনন্দবাজারটানাপড়েনের দিন গুজরানে এক টুকরো স্বপ্নের মতো উড়ে আসে আরব-দেশের হাতছানি। মোটা টাকা, গাঁয়ের বাড়িতে অচ্ছে দিন ফেরানোর সুবাসে ডানা ভাসিয়ে ওঁরা পাড়ি দেন মরু প্রান্তরে। তার পরে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

বিপ্লব। নিজস্ব চিত্র

বিপ্লব। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে দশটা বছর। ঘরে ফেরেনি ছেলে। কোনও ফোনও আসেনি। অথচ কনক বিশ্বাস প্রায় সর্বক্ষণ মুঠোয় বন্দি করে রাখেন মোবাইলটা। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেন, ‘‘বিপ্লব সুদান থেকে যে কোনও সময় ফোন করবে। যদি না পায়!’’

এই দশটা বছরে বিপ্লবের ফোন আসেনি। অসহায় বৃদ্ধার আক্ষেপ, ‘‘প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরে, রাষ্ট্রপতি, বিদেশমন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে। কেউই ছেলেটার খবর জানাল না।’’

কৃষ্ণনগরের কাছেই মইলকা গ্রামে বাড়ি কনক বিশ্বাসের। স্বামী ষষ্ঠীচরণ মূক ও বধির। দুই ছেলে, সজল আর বিপ্লব। মেয়ে রুমির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বড় ছেলে সজল তাই আইটিআই পাশ করে ২০০৫ সালে পাড়ি দেন দুবাই। তার দু’বছর পরে একটি তেলের কোম্পানিতে কাজ নিয়ে সুদানে পাড়ি দেন বিপ্লব।

২০০৮ সালের ১৩ মে সুদানে কর্মরত অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে যান চার ভারতীয় যুবক। তাঁদের তিন জনের সন্ধান পাওয়া গেলেও আজও ‘নিখোঁজ’ বিপ্লব। ঘটনার মাস খানেক পরে বিদেশমন্ত্রকের তরফে শুধু জানা যায় যে, সেই দেশের এক জঙ্গিগোষ্ঠী বিপ্লবকে অপহরণ করেছে। তার পর থেকে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেছে বিপ্লবের পরিবার। চিঠিচাপাটিও করা হয়েছে বহু দফতরে। কিন্তু কোথাও কোনও সদুত্তর মেলেনি। বিপ্লব মৃত না জীবিত তার কোনও সুস্পষ্ট উত্তর না মেলায় কোনও টাকাও দেয়নি জীবনবিমা সংস্থা। সরকারি ভাবেও কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি।

অপেক্ষায়: কনক বিশ্বাস।

এ দিকে, জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত কনক বিশ্বাস। বিপ্লবের প্রসঙ্গ উঠলেই ডুকরে ওঠেন বৃদ্ধা, ‘‘ছেলেটা বেঁচে আছে কি না দশ বছরে সেটুকুও জানতে পারলাম না! আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?” ঘটনার দিন চারেক আগে বাড়িতে ফোন করেছিলেন বিপ্লব। কনক তখন ব্যস্ত থাকায় দু’একটা কথার পরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাবু পরে ফোন করিস। ভাল করে কথা বলব। এখন হাতে খুব কাজ রে!’’ মাঝেমধ্যে মাঝরাতে এখনও তিনি ঘুম থেকে উঠে জানতে চান, ‘‘ফোনের আওয়াজ পেলাম যে! বিপ্লব ফোন করেছিল?’’ কনকের আফসোস, ‘‘সে দিন ছেলেটার সঙ্গে ভাল ভাবে কথাও বলতে পারলাম না। তখন কি ও কিছু বলতে চেয়েছিল?’’

বৃদ্ধা মা অসুস্থ বলে বাড়ি ফিরে এসেছেন বড় ছেলে সজল। তিনি বলছেন, “সব কিছু হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গেল। সংসারে শ্রী ফেরাতে দুই ভাই বিদেশে গেলাম। সেটাই কাল হল। এত দিন হয়ে গেল, কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াল না।” ২০০৯ সালে বিশ্বাস পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই প্রসঙ্গে সজল বলছেন, ‘‘সব শুনে পরে দেখা করতে বলেছিলেন তিনিও। তাই কালীঘাটের বাড়িতেও আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের আশ্বাস, “কী ভাবে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের পরে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “ওই পরিবার আমাদের কাছে এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Sudan UAE Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE