মোতি বিরিয়ানি। নিজস্ব চিত্র
রসনার সঙ্গে উপাসনার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। তাই দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজোর ফর্দ জুড়ে শুধুই ভোগের কেনাকাটার ফিরিস্তি। আবার, ভাইফোঁটা বা জামাইষষ্ঠীর মতো বাংলার চিরকালীন পার্বণগুলির যে কোনওটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সুখাদ্য ছাড়া পার্বণের কথা কোনও কালে ভাবতেই পারেনি রসনা রসিক বাঙালি। ঋতুর সঙ্গে মানানসই করে মানুষ সাজিয়েছে তার ইষ্ট দেবতার ভোগের থালা। এহেন বাঙালি যে মহাপুজোয় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার জন্য মরিয়া, সেটাই স্বাভাবিক। উৎসবের দিনে ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়ার রেওয়াজ চিরকালীন। শুধু সময়ের সঙ্গে হাত বদল হয়েছে হাতা-খুন্তির। একান্নবর্তী সংসারের মা-ঠাকুমাদের দায়িত্ব পালন করছেন হোটেল-রেস্তরাঁর মালিক এবং রাঁধিয়ের দল। ভোজন রসিকেরাও রসনাতুষ্টির জন্য উপযুক্ত মূল্য দিতে পিছপা নন।
দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে ক্রেতাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছোট-বড় হোটেল রেস্তরাঁতেই প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। কোথাও আয়োজন জামাই আদরের। চকচকে কাঁসার থালা, বাটি, গ্লাস সাজিয়ে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা পরিবেশক সাজিয়ে দিচ্ছেন ফুলকো লুচি, বেগুনভাজা, নারকেল কুচি দিয়ে ছোলার ডাল, কড়াইশুঁটি-আলু-পনিরের ডালনা, চাটনি, পায়েস, রসগোল্লা। শেষে সুগন্ধি পান। পুজোর দিনে এমন চিরাচরিত নিরামিষ পদ চাইলেই মিলবে কৃষ্ণনগরে জাতীয় সড়কের ধারের এক রেস্তোরাঁয়। দাম নাগালের মধ্যেই।
জেলা সদরের আর এক রেস্তরাঁ এ বার পুজোয় অতিথিদের রকমারি খাবারে আপ্যায়িত করার পাশাপাশি বদলে ফেলেছেন রেস্তরাঁর খোলনলচে। মালিক অরিন্দম গড়াই জানাচ্ছেন, দশ হাজার স্কোয়ার ফিটের রেস্তরাঁর জায়গা এ বার বাড়িয়ে করা হয়েছে পঞ্চাশ হাজার স্কোয়ার ফিট। তিনি বলেন, “প্রতিবারই দেখি দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর মতো যে কোনও উৎসবে লোকে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছেন। এটা খুব খারাপ লাগত। তাই এ বার পুজোর আগে দেড়শো জনের বসার ব্যবস্থা বাড়িয়ে সাড়ে তিনশো করা হয়েছে।”
থাকছে বাঙালি, দক্ষিণ ভারতীয়, মোঘলাই, হায়দরাবাদি, চাইনিজ থেকে বার্গার, পিৎজ়া, ডেসার্ট ও রকমারি আইসক্রিমের বিপুল সমাবেশ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কিছু স্পেশাল পদ মিলবে এখানে পুজোর ক’দিন। ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে দিলখুস হওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন অরিন্দমবাবু।
নবদ্বীপের এক রেস্তরাঁয় আবার পুজোর ক’দিন হরেক রকম বিরিয়ানির আয়োজন করা হয়েছে। মালিক নিতাই বসাক বলেন, “আমাদের এ বারের আয়োজন বিরিয়ানি। মোতি বিরিয়ানি, হায়দরাবাদের বিরিয়ানি থেকে চিকেন, মাটন, চিংড়ি এমনকি ইলিশ বিরিয়ানিও মিলবে। দাম ১১০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।” বিরিয়ানি ছাড়া পুজোর ক’দিন ওই রেস্তরাঁয় পাওয়া যাবে সিজলার। দাম ৩৫০ টাকা প্রতি প্লেট। সঙ্গে পাওয়া যাবে ৪০ টাকার চিকেন ড্রাম স্টিক বা ৪৫ টাকার গোল্ডেন ফ্রায়েড প্রনের মতো মুচমুচে খাবার।
তবে পুজোর ক’টা দিন তপন দত্ত এবং রণজিৎ দত্ত তাঁদের হোটেলে একেবারে ‘ট্র্যাডিশনাল’ খাওয়া-দাওয়া ব্যবস্থা রেখেছেন। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর চালু এই হোটেলের মাংসের খ্যাতি নদিয়া ছাড়িয়ে বহুদূর বিস্তৃত। পুজোর ক’দিন মাছের নানা পদ তৈরি রাখছেন অতিথিদের জন্য।
সব জায়গায় পুজোর মেনু মিলবে ষষ্ঠী থেকে। পুজোয় ভোজের বাদ্যি বেজে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy