Advertisement
০৩ মে ২০২৪

‘কোনির লড়াইটা আর কোনও দিন ভুলব না’

ক্লান্ত শরীরটা জল কেটে-কেটে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এক-এক করে সবাইকে পিছনে ফেলে। আর পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেন ক্ষিতদা— “ফাইট কোনি, ফাইট।”

বুঁদ: কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

বুঁদ: কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৭ ১৫:৩০
Share: Save:

ক্লান্ত শরীরটা জল কেটে-কেটে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এক-এক করে সবাইকে পিছনে ফেলে। আর পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেন ক্ষিতদা— “ফাইট কোনি, ফাইট।”

বইয়ের পাতায় পড়েছিল ওরা। মনে মনে কল্পনাও করেছিল ডাকাবুকো মেয়েটা আর তার ক্ষিতদাকে।

কিন্তু এলসিডি প্রোজেক্টর থেকে যখন পর্দায় প্রথম ভেসে উঠল কোনির মুখটা, কারও শক্ত হয়ে উঠল চোয়াল তো কারও হাতের মুঠো। গোটা ক্লাস তখন মনেপ্রাণে চাইছে সবাইকে ছাপিয়ে জিতে যাক মেয়েটা।

কোনির সেই লড়াই দেখে তখন মন্ত্রমুগ্ধ কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ঘরটা। খুদেদের টানটান উত্তেজনা দেখে প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বললেন, “দেখছেন, গোটা ক্লাসটা যেন হা করে গিলছে। আমরা তো এটাই চেয়েছি।”

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসের অন্যতম গল্প মোতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’। আবার অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালি’ আর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা টেনিদার গল্প ‘বন ভোজনের ব্যাপার’। নবম শ্রেণির পাঠ্য বঙ্কীমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’। এই সব গল্প বা উপন্যাস সম্পর্কে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতে ক্লাসরুমটাকেই একটা ছোটখাটো ‘সিনেমাহল’ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। এতে পাঠ্য বিষয়কে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, দাবি তাঁদের। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক থেকে শুরু করে পরিচালন সমিতিও। পরিচালন সমিতির সদস্য স্বদেশ রায় বলেন, “বাচ্চারা যে সিনেমাগুলো দেখছে, এতে এটা আর নিছক শুকনো পাঠ্যবিষয় থাকছে না। মনের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে। ক্লাসের পরীক্ষার খাতাতেই শুধু নয়, জীবনের খাতাতেও এর প্রভাব পড়বে।”

স্যারেদের পরিকল্পনাটা যে বেশ মনে ধরেছে, এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে দশম শ্রেণির আকাশ দত্ত, নিলাদ্রী বিশ্বাসরা। বলল, ‘‘কোনির লড়াইটা আর কোনও দিন ভুলব না।’’

প্রস্তাবটা প্রথম দিয়েছিলেন স্কুলের বাংলার শিক্ষক সুজন সারথী কর। তিনিই প্রথম বলেন, “পাঠ্যবইতে থাকা যে সব গল্প বা উপন্যাস সিনেমা হয়েছে, সেগুলো ছাত্রদের দেখালে কেমন হয়!” লুফে নিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের নিজস্ব প্রজেক্টর আছে। ফলে বিশেষ অসুবিধাও হয়নি। এর আগেও ছাত্রদের দেখানো হয়েছিল দঙ্গল, জুরাসিক পার্ক। কিন্তু সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে একে-একে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের দেখানো হয়েছে ‘পথের পাঁচালি’ নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের ‘কোনি’। তবে নবম শ্রেণির জন্য ‘রাধারাণী’র খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের এখন টেনিদার ‘চারমূর্তি’ দেখানোর প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষকদের দাবি, এতে চারমূর্তিকে সচক্ষে দেখে চরিত্রগুলো সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে খুদেদের। ‘‘বলা যায় না, ছেলেরা টেনিদার মতো ‘ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফেলিস ইয়াক ইয়াক’ করে আরও দু’টো গল্প বেশিই পড়ে ফেলবে। সেটা কি বড় পাওনা নয়?’’— বলছেন শিক্ষকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moti Nandi Koni
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE