Advertisement
E-Paper

দুই মোটরবাইকে ধাক্কা, পিটুনিতে মৃত্যু তরুণের

বর্ষার রাতের ভরন্ত গঙ্গার রূপ নাকি অপূর্ব! বন্ধুদের কাছে বহু বার শুনেছিল তারা। দেখা হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চার বন্ধু গিয়েছিল গঙ্গার ঘাটে। বাড়ি ফেরা হল না এক জনের। মোটরবাইক দুর্ঘটনার জেরে তাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। আহত তার তিন বন্ধুও।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
অবরোধ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক।

অবরোধ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক।

বর্ষার রাতের ভরন্ত গঙ্গার রূপ নাকি অপূর্ব! বন্ধুদের কাছে বহু বার শুনেছিল তারা। দেখা হয়নি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চার বন্ধু গিয়েছিল গঙ্গার ঘাটে। বাড়ি ফেরা হল না এক জনের। মোটরবাইক দুর্ঘটনার জেরে তাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল কিছু লোকজনের বিরুদ্ধে। আহত তার তিন বন্ধুও।

মৃতের নাম সুপ্রকাশ দুর্লভ (১৮)। বাড়ি রানাঘাটের হবিবপুরে। বাকিদেরও তাই। দু’টি মোটরবাইকে কাশীনাথপুরে গঙ্গা দেখতে গিয়ে তারা দুর্ঘটনায় পড়ে। আর তার পরেই ওই ঘটনা। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে সুপ্রকাশের মৃতদেহ রেখে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা।

সুপ্রকাশ দুর্লভ

সুপ্রকাশের বাবা শ্যামল দুর্লভ কাশীনাথপুরের ছ’জনের বিরুদ্ধে রানাঘাট থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। গ্রামবাসী হুমকি দিয়েছেন, অভিযুক্তদের ধরা হলে থানা ঘেরাও করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুপ্রকাশ, তার বন্ধু সৌরভ রাজবংশী ও রাজেশ বিশ্বাস একটি শাড়ি প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করত। আর এক বন্ধু সৌরভ বিশ্বাস দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। অনেক দিন ধরেই তারা বন্ধুদের কাছে শুনেছিল, তারাপুর ঘাট থেকে রাতের গঙ্গা দেখতে ভাল লাগে। সেই জন্যই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ দু’টি বাইকে চার জন সেখানে যায়। ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ তারা বাড়ির দিকে রওনা হয়।

এ দিন হবিবপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুয়ে সৌরভ বিশ্বাস জানায়, সে আর রাজেশ একটি বাইকে ছিল। পিছনের বাইকে আসছিল সুপ্রকাশেরা। চালাচ্ছিল সুপ্রকাশ, পিছনে বসে ছিল সৌরভ রাজবংশী। কাশীনাথপুরে আচমকা একটি আওয়াজ শুনে সে পিছনে ফিরে দেখে, সুপ্রকাশেরা রাস্তায় পড়ে রয়েছে। পড়ে আছে উল্টো দিক থেকে আসা অন্য একটি বাইকও।

সৌরভ রাজবংশী জানায়, তাদের বাইকের সঙ্গে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাইকের ধাক্কা লাগে। পড়ে যেতে দেখে রাজেশরা বাইক ঘুরিয়ে ফিরে এসে তাদের তোলে। কারওরই গুরুতর চোট লাগেনি। দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছিল। এমন সময়ে এলাকার যুবকদের একটি দল ছুটে এসে সুপ্রকাশ ও সৌরভ রাজবংশীকে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ।

সৌরভ বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘ওদের কয়েক জন বাঁশ নিয়ে এসে সুপ্রকাশদের পেটাতে শুরু করেছিল। আমি আর রাজেশ বাধা দিতে গেলে আমাদের মেরে সরিয়ে দেয়। বলতে থাকে, ‘বড্ড বাড় বেড়েছে তোদের। গঙ্গার ধারে ফূর্তি করতে যাওয়া?’ চোখের সামনেই মার খেয়ে সুপ্রকাশ আর সৌরভ লুটিয়ে পড়ে।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, লুটিয়ে পড়া দুই বন্ধুকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল বাকি দু’জন। সুপ্রকাশের দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। স্থানীয় যুবকেরা দু’টি বাইকেরই চাবি কেড়ে নেয়। তখনই রাজেশদের পরিচিত দু’জন বাইকে হবিবপুরের দিকে যাচ্ছিল। তাদের বাইকে সুপ্রকাশকে তুলে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সৌরভ বিশ্বাস বলে, ‘‘তখনও সৌরভ রাজবংশী মাটিতে পড়ে। তার মধ্যেই কিছু লোকজন আমাদের জেরা শুরু করে। পরিচয় জানতে পেরে মিনিট কুড়ি পরে বাইকের চাবি ফেরত দেয়। আমি আর রাজেশ সৌরভকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ রাজেশরা যখন হবিবপুর হাসপাতালে পৌঁছয়, তখন সুপ্রকাশকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় রানাঘাট থেকে তাকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথেই মৃত্যু হয় তার। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ কাশীনাথপুরে যায়। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলে।

প্রতিবাদে সামিল সৌরভ রাজবংশীও।

সুপ্রকাশের মৃত্যুর খবর আসতেই তেতে ওঠে হবিবপুর। শ্যামলবাবুকে নিয়ে সকালে থানায় যান গ্রামবাসী। তিনি পিটিয়ে মারার অভিযোগ জানান। সকালে হাসপাতাল থেকে সরাসরি থানায় হাজির হয় সৌরভ বিশ্বাসও। সে এবং রাজেশ পুলিশকে পুরো ঘটনা জানায়। তাদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। এসডিপিও (রানাঘাট) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “ছ’জনের বিরুদ্ধে পিটিয়ে মারার অভিযোগ হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”

হবিবপুরের দুর্লভপাড়ায় বাড়ি সুপ্রকাশদের। তারা দুই ভাই। সে বড়। তার বাবা শ্যামল দুর্লভ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ময়নাতদন্তের পরে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সুপ্রকাশের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন হবিবপুরের বাসিন্দারা। হাসপাতাল থেকে স্যালাইনের বোতল হাতে এসে অবরোধে সামিল হয় সৌরভ রাজবংশীও। তাদের দাবি, গ্রেফতার করতে হবে অভিযুক্তদের। পুলিশ গিয়েও দীর্ঘক্ষণ অবরোধ তুলতে পারেনি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস মেলার পর পৌনে ৬টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সাধনাশঙ্কর নাথ বলেন, ‘‘আশা করি পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ করবে।’’

public lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy