সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদন জানিয়ে নাগরিকত্বের শংসাপত্র হাতে না পেলেও ভোট দেওয়া যাবে কি না, অনেক দিন ধরেই সেই প্রশ্ন ছিল মতুয়া তথা বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের। তা যে যাবে না, মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্ট তা জানিয়ে দিয়েছে। ফলে আবেদনকারীরা যেমন দিশাহারা, অস্বস্তিতে পড়েছেন তাঁদের আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া বিজেপি নেতারা।
এত দিন বিজেপির বহু নেতাই বলে আসছিলেন, সিএএ-তে আবেদন করলেই ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে। তাঁদের সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করে অনেক মতুয়া তথা উদ্বাস্তু মানুষজন আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও শংসাপত্র পাননি। কবে তা মিলতে পারে সেই প্রশ্নেরও সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে সভা করতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কী বলেন, সেই দিকে মতুয়াদের একটা বড় অংশই তাকিয়ে রয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, আজই ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) শেষ দিন। ২০০২ তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, এ রকম প্রায় আড়াই লাখ লোকের বড় অংশই মতুয়া। তাঁদের একটা সামান্য অংশই এখনও পর্যন্ত আবেদন করেছেন। কিন্তু এখন সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় মতুয়া সম্প্রদায়ের ভিতর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের (বিজেপি-র সুব্রত ঠাকুরপন্থী) নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশীল বসুর আশ্বাস, “ভোটের অন্তত ছ’মাস বাকি। তার মধ্যে সকলেই শংসাপত্র পেয়ে যাবেন।” তবে কিসের ভিত্তিতে তিনি এই আশ্বাস দিচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়।
এখনও পর্যন্ত নদিয়া জেলায় সিএএ-র যা অবস্থা তাতে আবেদন করার পর শুধু শুনানিতে ডাক পেতেই মাস দুয়েকের বেশি লেগে যাচ্ছে। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে মাসে হয়তো এক দিন পাঁচ থেকে ছ’টা করে শুনানি করলেই হয়ে যেত। গত এপ্রিল-মে মাসে বিহারে এসআইআর শুরু হওয়ার পর আবেদনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় দিনে ৩০ থেকে ৪০ জনের শুনানি শুরু হয়। এ রাজ্যে এসআইআর শুরু হওয়ার পর তা আরও বেড়েছে। এখন দিনে অন্তত দুটো করে টেবিল বসিয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন দৈনিক গড়ে ৭৫ থেকে ১০০ জনকে ডাকা শুরু হয়েছে। টেবিল আরও বাড়ানো হবে।
কিন্তু তাতেও কি সমস্যার সমাধান হবে? ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক শুনানির সংখ্যা বাড়িয়ে দিনে ৫০০ করার কথা বলা হচ্ছে। যদি তা সম্ভবও হয়, তা হলেও ছ’মাসে খুব বেশি হলে ৯০ হাজার শুনানি সম্ভব। শংসাপত্র হাতে পেতে আরও বেশ কিছু দিন লাগবে। তা হলে বাকিুদের কী হবে? অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃণমূলপন্থী সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসুর দাবি, “বিজেপি যে প্রথম থেকেই মতুয়াদের সঙ্গে মিথ্যাচার করে আসছে, সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। মতুয়ারা আর ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার অপেক্ষায় রয়েছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)