Advertisement
E-Paper

অ্যাসিড ছুড়ে উধাও পড়শি, জখম তরুণী

দীর্ঘদিন ধরেই উত্যক্ত করা হচ্ছিল। স্বামী বাইরে। তিন মাসের ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে সংসারটা একাই টানতে হতো তাঁকে। পড়শি যুবকের অশালীন ইঙ্গিত নিয়ে তাই বিশেষ মাথাই ঘামাননি মহিলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৭

দীর্ঘদিন ধরেই উত্যক্ত করা হচ্ছিল। স্বামী বাইরে। তিন মাসের ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে সংসারটা একাই টানতে হতো তাঁকে। পড়শি যুবকের অশালীন ইঙ্গিত নিয়ে তাই বিশেষ মাথাই ঘামাননি মহিলা।

তবে তাতে ফল হয়েছিল উল্টো। পাড়ার স্বপন সরকার নামে ওই যুবক পেয়ে বসেছিল যেন। বেড়েছিল বিরক্ত করার বহর। এমনকী রাতবিরেতে একলা পেয়ে মহিলাকে কটুক্তি করতেও ছাড়ত না সে। তাতেও তেমন পাত্তা না মেলায় বীরপুঙ্গব ওই যুবকের ক্ষোভ জমেছিল।

বুধবার রাতে ওই মহিলার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে সেই আস্ফালনই প্রকাশ করেছে সে। শেষ পর্যন্ত তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে তার ‘প্রতিশোধ’ নেয় প্রতিবেশী যুবক। ঘটনার পর থেকেই গ্রামছাড়া স্বপন। গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে পুলিশও জানিয়েছে— খোঁজ মেলেনি তার।

বুধবার রাতে চাকদহের তাতলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের গোঁরাচাদতলা মশড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। স্বপন সরকার নামে অভিযুক্ত যুবক ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা। পুলিশ তাঁর খোজে সম্ভাব্য সব জায়গায় তল্লাশী চালাচ্ছে। জখম বধূটিকে আহত অবস্থায় প্রথমে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি। কর্ম সূত্রে তিনি বর্তমানে কর্নাটকে রয়েছেন। তিন বছরের একমাত্র ছেলেকে ওই তরুণী মশড়ার বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাড়ির কাছেই স্বপনের বাড়ি। পেশায় হাতুড়ে স্বপনের বেশ কয়েকটি জায়গায় চেম্বার রয়েছে। সে বিবাহিত। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে ওই তরুণী ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। আশপাশের বাড়িগুলিতেও সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ১১টা নাগাদ তাঁর দরজায় কেউ টোকা দেয়।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই তরুণী জানান, হটাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দ শুনে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে চাননি। কিন্তু, পর পর তিনবার শব্দ শোনার পর তিনি ভিতর থেকে বারবার জানতে চান, দরজার বাইরে কে?। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। আর কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে, বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি দরজা খুলে বাইরে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে কাউকে দেখতে পাইনি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম। তখনই আচমকা পিচকারি জাতীয় কিছু দিয়ে দূর থেকে একজন অ্যাসিড ছোড়ে।’’ তিনি একজনকে পালিয়ে যেতে দেখেন।

ওই তরুণীর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তাঁর হাতে, মুখে এবং বুকে অ্যাসিড লাগে। যন্ত্রনায় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। গ্রামের কয়েকজন স্বপনকে পালিয়ে যেতে দেখেন বলে দাবি। পাড়ার লোকেরাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তরুণীরও অভিযোগ স্বপন এই কাজ করেছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সে তাঁকে কু প্রস্তাব দিচ্ছিল। তিনি তাকে তা বন্ধ করতে বলেছিলেন। তারপরে সে তাঁকে নানাভাবে উত্তক্ত করতে শুরু করেছিল। তরুণী বলেন, ‘‘স্বপন আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করত। আমি পাড়ার সবাইকে তা জানিয়ে দেব বলেছিলাম। তার পর সে আমাকে প্রায় সব সময় হুমকি দিত। অ্যাসিড ছুড়ে সে প্রতিশোধ নিল।’’

মহিলার এক আত্মীয় স্বপনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক পলাতক। তাঁর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে তল্লাশী চালানো হয়েছে। কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেই সূত্র ধরেই এগনো হচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করা হবে। কখনও করিমপুর, কখনও রানাঘাট, এর আগেও জেলায় বেশ কয়েকবার অ্যাসিডের হামলার শিকার হয়েছেন মহিলারা। প্রতিটি ঘটনার পরেই বার বার বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ হোক। সরকার থেকেও বার বার বলা হয়েছে যে, সাধারণ দোকানে বা গয়নার দোকান থেকে সাধারণ মানুষকে অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু, তার পরেও সাধারণের হাতে চলে আসছে অ্যাসিড।

Neighbour Acid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy