চলছে প্রশিক্ষণ। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
সরকারি পরিভাষা, কিঞ্চিৎ খটমট তো বটেই। গ্রামীণ পঞ্চায়েতে মাঠ-কাদা-সালিশির সঙ্গে পরিচয় রয়েছে তাঁদের, তা বলে, ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বশক্তিকরণ প্রকল্প, স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প, পুষ্টি-মিশন— নাহ, সদ্য পঞ্চায়েত সদস্য হওয়া মানুযটি বিড় বিড় করেন, ‘‘এমন জানলে কে চাইত ভোটে জিততে!’’
পঞ্চায়েতে সদ্য জেতা সেই সব মানুষজনকে নিয়েই এ বার ক্লাস শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। যাতে তাঁরা কাদা-মাটির পাশাপাশি সরকারি ভাষা এবং তার প্রয়োগ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হতে পারেন। নির্মল বাংলা কিংবা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তাঁদের ভূমিকাটা ঠিক কি? এত দিন তার কিছুই জানতেন না বহরমপুরের সাটুই-চৌরিগাছা পঞ্চায়েত প্রধান সুব্রত সিংহ। এ বারে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে প্রধান হয়েছেন চব্বিশ বছরের সুব্রত। গ্রাম বিষয়ক একটা ধারনা থাকলেও পঞ্চায়েতের কাজকর্মের নিয়ে কোনও দিন মাথাই ঘামাননি তিনি। অথচ ভোটে জিতে এ বার তিনিই প্রধান।
সুব্রত একা নন, জেলার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, উপ-প্রধানদের একই দশা। তাই এ বার, প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কাজ এবং অবশ্যই অধিকার সম্পর্কে বোঝানো শুরু করেছে প্রশাসন। গত ৩ এবং ৪ ডিসেম্বর জেলার সমস্ত প্রধান এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলার উপ-প্রধানের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী রবিবার বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী তা বোঝাতে জেলার সমস্ত প্রধানকে তলব করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলছেন, ‘‘এ বারে অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধান একেবারে আনকোরা নতুন। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁদের ধারণা দিতেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।’’
বিজেপি পরিচালিত সাটুই-চৌরিগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুব্রত সিংহ বলেন, ‘‘পড়াশুনা শেষ করে সবে পারিবারিক ব্যবসায় হাত লাগিয়েছি। এমন সময় দলের পক্ষ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব আসে। দলের সেই প্রস্তাবে না করতে পারিনি। ভোটে জয়ী হওয়ার পর প্রধান নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই তো নেই।’’ বহরমপুরের সাহাজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাসতুরা খাতুন বলছেন, ‘‘প্রথম রাজনীতিতে এলাম। এসেই একেবারে প্রধান। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ক্লাসের কথা শুনে একটু ভরসা পাচ্ছি।’’
বহরমপুরের ভাকুড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবণী বিশ্বাসও এ বারে প্রথম। শ্রাবণী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের প্রথম প্রধান হওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে না-জানাই স্বাভাবিক। তবে প্রশাসন যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, সেখান থেকে অনেকটাই জেনেছি।’’ সেই জানা-শেখার মধ্যে দিয়েই নতুন করে সরকারি কাজ কর্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে তাঁদের। সেই ভরসাতেই বুকে বল পেয়েছেন বুঝি তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy