Advertisement
E-Paper

নির্জন নদীচরে চলছে ‘অবাধ’ সৎকার কাজ

জনবসতিহীন ধু-ধু প্রান্তরে মাটির রাস্তাও যেখানে শেষ, সেখানে এই শবদাহের জায়গা। আশপাশে খানিক তফাতে শুধুই চাষের জমি।

সাগর হালদার  

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২০

নিজস্ব চিত্র।

জলঙ্গি চরে পোঁতা দুটো বাঁশের খুঁটি। আর ইতিউতি পোড়া কাঠের টুকরো। দূরে-দূরে কোনও জনমনিষ্যি নেই।

এক কথায়, এই হল ধাওড়াপাড়া শ্মশান।

পলাশিপাড়ার গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের রানিনগর সর্দারপাড়ার লোকালয় এখান থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার। জনবসতিহীন ধু-ধু প্রান্তরে মাটির রাস্তাও যেখানে শেষ, সেখানে এই শবদাহের জায়গা। আশপাশে খানিক তফাতে শুধুই চাষের জমি।

বৃহস্পতিবার বেলা যখন সবে চড়ছে, সেই মাঠে কাজ করছিলেন কয়েক জন চাষি। তাঁরা জানালেন, ওই এলাকার কেউ মারা গেলে এই শ্মশানেই তাকে দাহ করা হয়। কারা করে? ডোম-টোম কাউকে তো চোখে পড়ছে না? চাষিরা জানান, মৃতের পরিবারই কাঠ সাজিয়ে দাহ করে। শবদাহের আগে ডাক্তারের দেওয়া ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ কে দেখেন? কে-ই বা দাহের পর দেন রসিদ বা ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’? কিছুটা বিরক্তির সঙ্গেই উত্তর আসে— “ও সব কে করবে? দেখছেনই তো, এখানে কেউ নেই। ডোম নেই, কোনও কর্মী নেই। যে যার মতো কাজ মিটিয়ে চলে যায়।”

ঘটনাচক্রে, এই নদিয়া জেলাতেই সেই শ্মশান, যেখানে কোনও ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়া দাহ করা হয়েছিল গণধর্ষণের পরে প্রবল রক্তক্ষরণে মৃত কিশোরীকে। তবে এ রকম শ্মশান যে ওই একটিই নয়, বরং জেলার আনাচে-কানাচে অনেক ছড়িয়ে রয়েছেস, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ধাওড়াপাড়া শ্মশান তারই একটি।

শ্মশানের পাশেই গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় গোপীনাথ পুর পঞ্চায়েতের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তহবিল থেকে করে দেওয়া হয়েছে একটি ঘর। সেখানে তালা বন্ধ। সেই ঘরের পাশে বসে ছিলেন কয়েক জন বয়স্ক চাষি। তাঁরা জানান, এখানে শ্মশানকালী পুজো হয়। সেই পুজোর রাখার জন্যই এই ঘর পঞ্চায়েত থেকে করে দিয়েছে। ওই চাষিদের এক জন অখিল বিশ্বাস বলেন, “দিনরাত যখনই হোক, গাঁযের লোক নির্দ্বিধায় এই শ্মশানে এসে মৃতদেহ দাহ করেন।”

আর এক জন ভগীরথ মণ্ডলের কথায় , “দাহ করার পর স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে বলে পঞ্চায়েত থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র সংগ্রহ করা হয়।” গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের ধাওড়াপাড়ার পঞ্চায়েত সদস্য দুর্গাবতী মণ্ডলের কথায়, “মৃতের পরিবার আবেদন ডেথ সার্টিফিকেট চাইলে তা পঞ্চায়েতেকে জানানো হয়। পরে পঞ্চায়েত সেই পরিবারকে মৃতের শংসাপত্র প্রদান করে।”

তবে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা এ ভাবে মৃতের শংসাপত্র দেন না। ধাওড়াপাড়া শ্মশানে কোনও মৃতদেহ দাহ হলে তা ওই এলাকার আশাকর্মীরা পঞ্চায়েতে জানান। এর পর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট প্যাডে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য লিখে দেন। সেই কাগজ মৃতের পরিবার নিয়ে যান পলাশি শ্মশানে। সেখান থেকে দেওয়া হয় ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’। সেই শংসাপত্রের কাগজ দেখেই মৃত্যুর শংসাপত্র দেয় পঞ্চায়েত। অর্থাৎ, মৃতদেহ দাহ করা হয় এক শ্মশানে, পরে অন্য শ্মশান থেকে ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়!

নিয়ম অনুযায়ী, শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েতের হাতে থাকার কথা। সেই নিয়ন্ত্রণ কি এখানে আছে? অন্য কোনও এলাকা থেকে কেউ যদি মৃতদেহ এনে দাহ করে যায় বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেউ ময়নাতদন্ত এড়িয়ে তড়িঘড়ি মৃতদেহ পুড়িয়ে দিতে এলে তা কে দেখবে? কী ভাবে তা আটকানো যাবে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সাকিতা সর্দার। তাঁর দাবি, “ওখানে মৃতদেহ দাহ হলে এলাকার মানুষই আমাদের খবর দেন।”

যেখান থেকে লোকালয় অনেক দূরে, সেখানে রাত-বিরেতে কেউ দাহ করে করে চলে গেলে দেখতে আসবে কে?

কোনও সদুত্তর মেলেনি।

Death death certificate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy