ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে পর পর মারা গিয়েছিলেন দুই মহিলা।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তার পরেই শুরু হয়েছিল নার্সিংহোমে ভাঙচুর, বাদ যায়নি চিকিৎসকের লাগোয়া বাড়িতেও।
তবে ওই ঘটনার পরে, প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ কমিটি গড়ে শুরু করেছিল তদন্ত। দিন কয়েক আগে তদন্ত কমিটির সেই রিপোর্ট জমা পড়তেই মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হল রানাঘাটের অ্যাভিনিউ নার্সিংহোম।
মে মাসের গোড়ায় কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিতে চেয়েছিলেন— ওই নার্সিংহোমে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে তো। আমতা আমতা করায় জোর ধমক খেয়েছিলেন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। আর তার পরই শুরু হয়েছিল তৎপরতা।
১২ মে তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়তেই বোঝা গিয়েছিল ওই নার্সিংহোমের কপালে প্রশ্ন চিহ্ন পড়ে গেল। এ দিন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
রিপোর্টে নার্সিংহোম এবং চিকিৎসকের গাফিলতিতেই ওই দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দুই রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় ওই নার্সিংহোমে প্রশিক্ষিত নার্স (নূন্যতম জিএনএম) ছিল না। ছিল না কোনও সহকারি শল্য চিকিৎসকও। এই অবস্থায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অস্ত্রোপচারের অনুমতি দেওয়া যায় না, তাই বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হল নার্সিংহোম। কেন ওই ‘শাস্তি’?
রানাঘাট আইশতলার নমিতা দাসের (২৬) অস্ত্রোপচারের পরে সন্তান প্রসব হয় ওই নার্সিংহোমে। ঘটনার পর থেকে নমিতার নানান জটিলতা শুরু হয়। অভিযোগ, নমিতার পরিবার বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও চিকিৎসক নমিতার চিকিৎসাই করেননি। ৪ এপ্রিল কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। এপ্রিলের গোড়ায় অস্ত্রোপচার হয় হবিবপুরের অনিতা পালের (৪৫)। বাদ যায় জরায়ু। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পর দিন মৃত্যু হয় তাঁরও।
তবে, ঘটনার পরেই নার্সিংহোমের দুই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তাঁদের কোনও গফিলতি ছিল না। কিন্তু তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই নার্সিংহোমে মৃত নমিতা দাসের পেটে রক্তমাখা তুলো রয়ে গিয়েছিল। যার ফলে তার পেটে পচন ধরে গিয়েছিল। অন্য প্রসূতি অনিতা পালের জরায়ু বাদ দেওয়ার অস্ত্রোপচারের পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। সেই সময় চিকিৎসকরা রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা না করে রোগীকে জোর করে নার্সিংহোম থেকে বের করে দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এরপরেও ওই নার্সিংহোম খোলা রাখার প্রশ্ন আসছে কী করে!’’
নার্সিংহোমের মালিক অঞ্জনা কুণ্ডু অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের নার্সিংহোম সাময়িক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করছি।’’ তবে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার তাঁদের নেই। তাই রিপোর্ট স্বাস্থ্য কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy