Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুনের পরে বিনয়কে দেখে বন্ধু

লক্ষ্মীকে খুন করে তাঁর গলা থেকে হার খুলে নিয়েছিল রাজমিস্ত্রি বিনয় বিশ্বাস। সেটা যে ইমিটেশন, তা সে তখন বুঝতে পারেনি। তাঁর মোবাইল থেকে সিম খুলে ফেলে দিয়ে সেটিও বিনয় বাড়ি নিয়ে যায়। সেই হার আর ফোন পুলিশ উদ্ধার করেছে। 

ধৃত বিনয়। নিজস্ব চিত্র

ধৃত বিনয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পলাশিপাড়া  শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

লক্ষ্মীকে খুন করে তাঁর গলা থেকে হার খুলে নিয়েছিল রাজমিস্ত্রি বিনয় বিশ্বাস। সেটা যে ইমিটেশন, তা সে তখন বুঝতে পারেনি। তাঁর মোবাইল থেকে সিম খুলে ফেলে দিয়ে সেটিও বিনয় বাড়ি নিয়ে যায়। সেই হার আর ফোন পুলিশ উদ্ধার করেছে।

পুলিশের দাবি, রামচন্দ্রপুরে জলঙ্গির চরে লক্ষ্মী হালদারকে খুন করে বিনয় যখন উঠে আসছে, সাধন মাঝি নামে বন্ধুস্থানীয় এক রাজমিস্ত্রি তাকে দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁকে বিনয় বলে, সে শৌচকার্য করতে ওই চরে নেমেছিল। এই মামলায় সাধনকে সাক্ষী করতে চাইছে পুলিশ।

গত ১ নভেম্বর পলাশিপাড়ায় জলঙ্গি নদীতে লক্ষ্মীর দেহ মিলেছিল। কিন্তু তখন তা শনাক্ত করা যায়নি। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সোমবার রাতে মাঝবয়সি বিনয়কে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আপাতত ছ’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পুলিশ। লক্ষ্মীর বাড়ি চাপড়ার দৈয়েরবাজারে। বাড়িতে স্বামী ভজন হালদার ছাড়াও রয়েছে তাঁর দুই ছেলেমেয়ে— মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, ছেলে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কিছু দিন আগে পড়শির বাড়িতে লক্ষ্মীর সঙ্গে আলাপ হয় তেহট্টের রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা বিনয়ের। ফোনে দু’জনের নিয়মিত কথাবার্তা। সেই সূত্রেই বিনয় জানতে পেরেছিল, লক্ষ্মীর পরিবারে অনটন চলছে। তাঁকে কাজ দেওয়ার অছিলায় কৃষ্ণনগর স্টেশনে ডেকেছিল সে। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে সেখান থেকে নিয়ে যায় পলাশিতে। সন্ধ্যায় পলাশিপাড়ায় জলঙ্গি সেতুর ধারে নদীর চরে নিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করে সে।

পুলিশের দাবি: জেরায় বিনয় জানিয়েছে, এর পরে দু’হাজার টাকা দাবি করায় গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে লক্ষ্মীকে সে খুন করে। তা ছাড়া, স্ত্রী আর ছেলে থাকায় নিজের বাড়িতেও সে লক্ষ্মীকে নিয়ে যেতে পারত না। নিজের চাহিদা মিটে যাওয়ায় লক্ষ্মীকে সরিয়ে দেওয়াই তার কাছে সব দিক থেকে ঠিক বলে মনে হয়েছিল। তাঁকে খুন করে ফোন আর হার নিয়ে সে বাড়ির রাস্তা ধরে।

পুলিশকে বিনয় জানিয়েছে, সেই রাতে সে নিজের বাড়িতেই ছিল। পরের দিন নদীতে মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেলেও সেখানে যায়নি। তবে ওই এলাকার কাছাকাছিই ঘোরাঘুরি করছিল। এর পরে বেশ কয়েক দিন তার খুবই ভয়ে-ভয়ে কেটেছে। পুলিশের গাড়ি এমনকি কোন সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে দেখলেও বুক ধড়ফড় করত। তবে দিন পাঁচ-ছয় পরে সব মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে যা। নিয়মিত রাজমিস্ত্রির কাজেও যাচ্ছিল। বিনয়ের মনে হয়েছিল, সে আর ধরা পড়বে না। তার নিজের মোবাইল ফোনের সিমও ছিল ভুয়ো তথ্য দিয়ে ডাল নামে নেওয়া। দু’মাস কাটার মুখে সে যে ধরা পড়তে পারে, বিনয় তা ভাবতে পারেনি।

লক্ষ্মী কেন এই ফাঁদে পা দিলেন?

তাঁর দাদা নির্মল হালদার বলেন, ‘‘ওদের অভাবের সংসার। গত বছর ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল। মাসে হাজার দুয়েক টাকার কিস্তিতে শোধ করতে হত। তাতেই ও আরও বেশি চাপে পড়ে গিয়েছিল।’’ বিনয়কে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Palashipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE