Advertisement
E-Paper

বাবাকে নিয়ে ফিরল না মা

গলাকাটা মাঠের কোলে নয়ানজুলিতে মুখ থুবড়ে যে বাসটা মঙ্গলবার দুপুরে গিলে খেয়েছে আটটি প্রাণ, সেই তালিকায় রয়েছে তাদের বাবা-মা, রাজেশ আর রীতা প্রামাণিক। থেঁতলে যাওয়া রক্তাক্ত বাপ-মায়ের অপেক্ষা করছে তারা।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
হাহাকার: মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্না মেয়েদের। —নিজস্ব চিত্র।

হাহাকার: মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্না মেয়েদের। —নিজস্ব চিত্র।

পাকা দেওয়ালে কাঁচা সিমেন্টের গন্ধ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সদ্য তোলা বাড়ির চালায় বর্ষায় লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা লাউ চারা। পাশের পুকুরে টলটলে জল।

প্রাণের তুমুল হুল্লোড়ের মধ্যেই বাড়ির এক চিলতে বারান্দায় ঠৌঁট কামড়ে কাঁদছে দুই সদ্য অনাথ নাবালিকা, স্নেহা আর রিয়া।

গলাকাটা মাঠের কোলে নয়ানজুলিতে মুখ থুবড়ে যে বাসটা মঙ্গলবার দুপুরে গিলে খেয়েছে আটটি প্রাণ, সেই তালিকায় রয়েছে তাদের বাবা-মা, রাজেশ আর রীতা প্রামাণিক। থেঁতলে যাওয়া রক্তাক্ত বাপ-মায়ের অপেক্ষা করছে তারা।

‘‘এই বলে গেল, মেয়ে দু’টোকে দেখ, আর ফিরল না গো!’’ নিশ্চুপ দুই বালিকার পাশ থেকে মাঝে মধ্যেই কান্নার রোল তুলছেন তাদের জেঠিমা মীরা।

সতেরো বছর ধরে, পুনের একটি টাইলস তৈরির কারখানায় কাজ করতেন রাজেশ প্রামাণিক (৩৭)। বছরে এক বার গ্রামে ফেরা। তিন মেয়েকে (পাঁচ বছরের ছোট্ট প্রিয়া এখন কাটোয়ায় মাসির বাড়ি) রঘুনাথপুর গ্রামে একাই থাকতেন রীতা (৩০)। ধান-ভাঙা মাঠের কাজ টুকটাক করে সংসার চলত। তবে, বছর খানেক ধরে থেকে থেকেই রাজেশের জ্বর, গায়ে হাতে পায়ে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট। এ বার তাই পাকাপাকি ভাবেই ফিরে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। এ দিন ভোরে হাওড়ায় নেমেই স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন , ‘‘এই পৌঁছলাম।’’ ভোর চারটেয় উঠে ছ’টার মধ্যেই কৃষ্ণনগরে পৌঁছে গিয়েছিলেন রীতা। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে বিকেলে বাড়ি ফেরা, এই ছিল পরিকল্পনা।

স্নেহা ক্লাস নাইন, সস্তা ফ্রকের কোণায় চোখ মুছে বলছে, ‘‘দশটা পাঁচে শেষ বার কথা হল, বাবা বলল, বিকেল অবধি বাড়ি থেকে বেরোস না মা, ফিরে গল্প হবে, কী গল্প হল!’’

সদ্য পাকা হয়েছে ঘর। সে ঘরে স্বামী-স্ত্রী, তিন মেয়ের সংসার আবার জমাট বাঁধার আগেই এ দিন দাঁড়ি পরে গেল। সাতাশি বছরের বাবা, জগন্নাথ এখন সব বোধের বাইরে, নিঝুম ঘরে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। গ্রামের লোক চাক বেঁধে রয়েছে বাড়ির সামনে। ফিস ফিস আলোচনা, ‘মেয়েগুলো থাকবে কোথায় এ বার!’

তিন-তিনটে মেয়েকে মীরার ঘাড়ে না চাপিয়ে দিন দুয়েক আগেই ছোটটিকে কাটোয়ায় বোনের বাড়ি রেখে এসেছিলেন রীতা। পড়শি মহিলা বিড়বিড় করেন, ‘‘ছোটটার বোধহয় গতি হয়ে গেল, মাসি নিশ্চয় দেখবে।’’ বাকিরা? এ দিন ভোরের বাস ধরার আগে মীরাকে বলে গিয়েছিলেন রীতা, ‘‘দিদি দেখ, বাইরে যেন টোটো করে না বেড়ায়!’’

থেকে থেকেই এসেছিল ফোন। শেষবারও উড়ে এসেছে মায়ের সতর্কবার্তা— ‘সাবধানে থাকিস মা!’

স্নেহা ফুঁপিয়ে ওঠে, ‘‘তোমরা একটু সাবধান হলে না মা!’’

Bus Accident Nadia West Bengal Accident তেহট্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy