Advertisement
E-Paper

শ্রীখোলের বোলে আজ সাম্বা-থুম্বা

উৎসব যত এগিয়ে আসে তত যেন ঘন হয় ভিড়। গাঢ় হয় আবির। দীর্ঘ হয় নবদ্বীপ মহামণ্ডল পরিক্রমার মিছিল। ক্যালেন্ডার মতে দোল উৎসব  ১ মার্চ, বৃহস্পতিবার চিহ্নিত হলেও নবদ্বীপ-মায়াপুরের সমস্ত বৈষ্ণব মঠ মন্দিরে দোল শুক্রবারে উদযাপিত হবে। কারণ দোল পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যয়

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৭
নবদ্বীপে দোল। নিজস্ব চিত্র

নবদ্বীপে দোল। নিজস্ব চিত্র

সুর-ভিড়-আবির— এই তিনে নবদ্বীপের দোল।

সরস্বতী পুজোর দুপুর গড়িয়ে বিকেলটা যাই যাই করলেই বুঝি দখলে বাতাস সির সির করতে সথাকে। তখন শীত থাক আর না থাক, ফুল ফুটক আর না ফুটুক, চৈতন্যধামে আনন্দবসন্ত।

ঠিক কবে যে উৎসবের শুরু তা কারুর ঠাহর হয় না। তার পর কোনও এক দিন ব্যস্ত অফিস টাইমে গোটা শহর থমকে যায় মিছিলে। জ্যামজমাট রাস্তা ভেসে বসন্ত কীর্তনের সুরে। বাস অটো বা টোটোর যাত্রীরা বিরক্তি মুছে শ্রীখোলের তালে তাল মেলায়।

উৎসব যত এগিয়ে আসে তত যেন ঘন হয় ভিড়। গাঢ় হয় আবির। দীর্ঘ হয় নবদ্বীপ মহামণ্ডল পরিক্রমার মিছিল। ক্যালেন্ডার মতে দোল উৎসব ১ মার্চ, বৃহস্পতিবার চিহ্নিত হলেও নবদ্বীপ-মায়াপুরের সমস্ত বৈষ্ণব মঠ মন্দিরে দোল শুক্রবারে উদযাপিত হবে। কারণ দোল পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। শুক্রবার সূর্যোদয় হচ্ছে পূর্ণিমার মধ্যে। তাই সেই দিনটিকেই ধরেই দোল উদযাপন হবে। নবদ্বীপের দোল চৈতন্যময়। তাঁর আবির্ভাব তিথি পালনই এখানকার দোল। তাই মন্দিরে মন্দিরে দোলের সন্ধ্যায় মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে অভিষেক বা অন্যান্য অনুষ্ঠান সবই হবে শুক্রবার।

দোল পরিক্রমার সময় কমে আসছে। বুধবার ভোর থেকে নগরের শিরা-উপশিরার মতো রাস্তা জুড়ে শুধুই পরিক্রমা। দোলের সবচেয়ে বড় দুটি পরিক্রমা বের হয় নবদ্বীপের কেশবজী গৌড়ীয় মঠ এবং দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের আয়োজনে। কেশবজী মঠের পরিক্রমায় এ বার অংশ নিয়েছিলেন দেশ বিদেশে ভক্ত মিলিয়ে কমবেশি কুড়ি হাজার মানুষ। অন্যদিকে দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের পরিক্রমায় অংশ নিয়েছেন প্রায় তেমনই সংখ্যক।

নবদ্বীপের দোলের সব রং লুকিয়ে থাকে ওই কীর্তনের সুরের মাঝে। পদাবলী কীর্তন, সংকীর্তন বা লীলা কীর্তনের রকমারি সুর নবদ্বীপের দোলে আবির গুলাল কুমকুমের কাজ করে। পরিক্রমার হাজার কন্ঠের সংকীর্তনের বিপরীতে নিরিবিলি বৈষ্ণব ভজনকুটিরে দোলের গান ভাসে অন্য ভাবে। ভজনকুঠির নিকনো উঠোনে দোলের সন্ধ্যায় বসে বসন্ত কীর্তনের আসর। আড়বাঁশির সুরে মৃদঙ্গের তালে প্রবীণ কীর্তনীয়া সরস্বতী দেবী ধরেন, “দেখ দেখ ঋতুরাজ বসন্ত সময়, সহচর সঙ্গে বিহরে গৌর রায়। ফাগু খেলে গোরাচাঁদ নদীয়া নগরে, যুবতীর চিত হরে নয়নের শরে।”

নগরের পথ কিংবা নিভৃত রাধাকুঞ্জ নয়। বসন্তকীর্তন বদলে দেয় যে কোন মঠ মন্দিরের রঙ। বদলে দেয় ওই বসন্ত কীর্তন। দোল পূর্ণিমার আগের রাত। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভুর শতাব্দী প্রাচীন মন্দির সুরে শব্দে সুগন্ধে ভেসে যাচ্ছে। আবির কুমকুম অগুরুর গন্ধ মম করছে। দোলকীর্তনের আসর বসেছে। বসন্তের সুরে ধুয়ে যাচ্ছে মন্দির চত্বর।

বিরাট নাটমন্দিরে সাদা কালো মার্বেলে দাবার ছক। এক দিকের গর্ভ গৃহে বেদিতে রূপোর সিংহাসনে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত মহাপ্রভুর পাঁচশো বছরের বেশি প্রাচীন বিগ্রহ। ফুলে ফুলে ছাওয়া। সামনে অভিনয় হচ্ছে গোরা রায়ের জীবন কথা। বৈষ্ণব বসন্ত এভাবেই আসে নবদ্বীপে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বসন্তকীর্তন সুরে ঘটেছে রদবদল। বাংলা কীর্তনে মিশেছে হার্ড রক থেকে ক্যালিপসো। সাম্বা থেকে পপ। শ্রীখোলের পাশে থুম্বা, আড়বাঁশির পাশে আকোর্ডিয়নের অনুষঙ্গে কীর্তন ক্রমশ অচেনা হয়ে যাচ্ছে যেন। বদলে যাচ্ছে পরিক্রমারত ভক্তবৃন্দের গৌড়ীয় নৃত্যের ছন্দও।

Holi Mayapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy