Advertisement
E-Paper

গ্যালারিতে বসেই ভোটের ম্যাচ

সাতটা না বাজতেই গ্যালারি ভর্তি প্রায়। নিজেদের ম্যাচ হয়ে গিয়েছে আগেই। টেনশন নেই। এ বার জমিয়ে দেখতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:২৩
c-চা জুড়িয়ে জল। চোখ আটকে ভোট-তরজায়। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

c-চা জুড়িয়ে জল। চোখ আটকে ভোট-তরজায়। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

উনুনে আঁচ পড়েছিল ভোরেই।

সাতটা না বাজতেই গ্যালারি ভর্তি প্রায়। নিজেদের ম্যাচ হয়ে গিয়েছে আগেই। টেনশন নেই। এ বার জমিয়ে দেখতে হবে।

আজ তো বড় ম্যাচ! বড় বড় সব প্লেয়ার... ববি, পার্থ, শোভন, সুব্রত, সুজন... রেজ্জাক, কান্তি... ভবানীপুরে দিদি ভার্সাস বৌদি...

করিমপুরে তন্ময়ের চায়ের দোকান রোজই খুলে যায় সকাল-সকাল। বাঁধা খদ্দের বেশির ভাগ। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা। চায়ের গেলাস চালাচালি হচ্ছে। ও দিকে টিভিতে টুকটাক ইভিএম খারাপ, লম্বা লাইন, জওয়ানের জলপাই, নাকাবন্দি— গোড়ার দিকটায় যেমন হয় আর কি।

জওয়ানের দাপট ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ। বিশেষ ছাপ্পা-টাপ্পা মারতে পারেনি কেউই। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলিতেও যে পারবে না, নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানত কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর।

কাজেই খেলা খানিক গড়াতে যখন হুগলির শ্রীরামপুর বা হরিপালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তাড়া খেয়ে তৃণমূল ‘ফাউল ফাউল’ করে চেঁচাতে শুরু করল, ধুলিয়ানে চায়ের দোকানের টেবিলে জোর চাপড় মেরে কমরেজ তপন বলে উঠলেন, ‘‘দ্যাখ, কেমন লাগে!’’ চায়ের ভাঁড় উল্টে গড়িয়ে গেল উল্টো দিকে তৃণমূলের বুথ কমিটির নেতার দিকে!

ডোমকলে পাড়ার মাচায় বসে তৃণমূলের উঠতি যুবনেতা আবার ফস করে বলে বসলেন, ‘‘ওসব নাকা-ফাঁকায় কিছু হবে না। আমাদের সঙ্গে মানুষ আছে।’’ তৎক্ষণাৎ পাশ থেকে এক ডিওয়াইএফের গলা— ‘‘তা হলে আপনার দিদির গায়ে ফোস্কা পড়ছে কেন? নির্বাচন কমিশনকে এত গালাগাল কেন?’’ এরই মধ্যে টিভির পর্দায় দাপিয়ে হেঁটে আসছেন সোনালি গুহ আর মোবাইল কাকে যেন বলছেন— সিপিএমের এজেন্টদের মেরে বার করে দিন। গ্যালারিতে সব শিরদাঁড়া টানটান। ‘‘এই তো, চাপ খেতেই আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে’’— ফুট কাটলেন কাঁচাপাকা। ‘‘ছাড়ুন তো, এই সেনা-ফেনা যা শুরু করেছে না, এদের জন্য এটাই ঠিক’’— ফুঁসে উঠলেন বুথ কমিটি। বেলা পৌনে ১০টা। বেলডাঙা ১ ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ের কাছে চায়ের দোকান। তো‌য়ালে কাঁধে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক নেতা। চায়ের দোকান থেকে উড়ে এল, ‘‘গলায় গামছা যে বাম নেতা দিদির সঙ্গে ভিড়েছেন, তার খবর পেলেন?’’ শুনেই জবাব— ‘‘আমার তোয়ালে, গামছা নয়!’’

সাতসকালেই নবদ্বীপের বাড়িতে টিভির সামনে বসেছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহা। কেমন দেখছেন? নন্দ নিরুদ্বিগ্ন— “ভালই তো চলছে। কোথাও কোনও গোলমাল নেই। অনেকে অনেক কথা বলছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কাজ করেছেন, তিনিই জিতবেন।”

অনেক জায়গাতেই কিন্তু ছবিটা তেমন বলছে না। তৃণমূলের পার্টি অফিসগুলোয় সকালে ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাতলা। কিছু শাখা অফিস সকালের দিকে খোলাই হয়নি। উল্টো ছবি সিপিএমের পার্টি অফিসগুলোয়। যেমন, রানাঘাট বা চাকদহ জোনাল অফিস সারা দিনই গমগম করেছে। রানাঘাট, চাকদহ ও শিমুরালি কংগ্রেস অফিসেও ভিড় করে এসেছেন নেতাকর্মীরা।

কল্যাণী বি ব্লকে ২ নম্বর বাজারের হরিদার চায়ের দোকানে কলেজ শিক্ষক, ডাক্তার, চাকুরেদের ভিড় চিরকালই। ‘‘কেষ্টর জারিজুরি কিন্তু কলকাতায় চলবে না’’, এক শিক্ষকের মুখ থেকে কথাটা প়ড়া মাত্র বিমা কোম্পানির অফিসার বলে উঠলেন, ‘‘ও নিজেও জানে। আলফাল বলে খালি প্রচারে থাকতে চায়।’’

কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিসের ভিতরে কামিনীর ছায়ায় দুপুরের ঠেকে রাজা-উজির মারা চলছে। পাশে ছোটনের দোকান থেকে দুধ চা আর লিকারের বন্যা বইছে। এক ছোকরা মমতাকে প্রায় হারিয়ে দেয়-দেয়। রুখে উঠলেন ভোটে-খাটা প্রৌঢ়— ‘‘খোয়াব দেখার একটা সীমা আছে! আগে বল, কে তোদের মুখ্যমন্ত্রী ? সূর্য তো হারবেই!’’

বহরমপুরে ভূমি সংস্কার দফতরের পাঁচিল ঘেঁষা চায়ের দোকানে বিকেলে মাস্টারদের আড্ডাতেও উঠল প্রশ্নটা — ‘‘ধর, জোট যদি যেতে আর সূর্য যদি অস্তে যায়?’’ শিক্ষক নন্দন মণ্ডল গম্ভীর ভাবে বললেন, ‘‘আমরা আছি কী করতে? বহরমপুর থেকে জিতিয়ে পাঠাবো, না হলে কান্দি। ডেভিডকে বলা হবে সিটটা ছেড়ে দিতে!’’

নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পাঁচিল ঘেঁষা চায়ের দোকানের সামনে হঠাৎ হইচই বাধিয়ে দিয়েছেন এক মহিলা। সদ্যপ্রসূতি মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তার জন্য জলের বোতল আনতে গিয়ে হাপিস তাঁর কত্তা। আধ ঘণ্টা ধরে গরুখোঁজা খুঁজছেন। কত্তা সবে চায়ের দোকানে লিকারে চুমুক দিয়ে গলা চড়িয়েছেন, বাইরে থেকে হুঙ্কার— “বটে? এখানে বসে তুমি খেলা দেখছো?” ‘‘আরে, খেলা কোথায়, ভোট!’’— তড়বড় করে উঠে গিন্নির পিছু নেন খুড়ো।

দোকানে হাসির হররা ওঠে।

assembly election 5th phase murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy