Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙন-ভূমিতে দিন কাটছে আতঙ্কে

বছর বিয়াল্লিশ আগে বিয়ে হয়েছিল আনা বেওয়ার। দীর্ঘ সংসার জীবনে উত্থান-পত্তন দেখেছেন অনেক। দেখেছেন নদীর ভাঙন। চোখের সামনে একে একে তলিয়ে যেতে দেখেছেন শ্বশুরের ভিটে, জমি, নিজের সংসার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

গত বছরের ঘটনা। দুর্গাপুজোর ঠিক আগে। মহিশুরায় দোলা লাগল কাশের বনে। কিন্তু নদী পাড়ের সেই কাশে দেবীর বোধন হওয়ার আগে বেজে উঠল বিসর্জনের বাজনা। ছলছলে নদী রাতারাতি হানা দিল আনা বেওয়ার বাড়ির উঠোনে।

বছর বিয়াল্লিশ আগে বিয়ে হয়েছিল আনা বেওয়ার। দীর্ঘ সংসার জীবনে উত্থান-পত্তন দেখেছেন অনেক। দেখেছেন নদীর ভাঙন। চোখের সামনে একে একে তলিয়ে যেতে দেখেছেন শ্বশুরের ভিটে, জমি, নিজের সংসার। এখন সম্বল বলতে কয়েক ছটাক জমি। সেটুকুও বা কবে তলিয়ে যায় সেই ভয়ে কাঁটা আনা। তিনি বলেন, ‘‘নদী যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে একটুকুও বোধহয় থাকবে না। তখন পথে বসা ছাড়া কোনও গতি নেই।’’

নবদ্বীপ শহর ছেড়ে দক্ষিণ বরাবর এগিয়ে গেলে পড়ে মহিশুরা পঞ্চায়েত। নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরের ঠিক বিপরীত প্রান্তে মহিশুরা এখন ভাঙন-ভূমি। নদী এখানে নিয়মিত ভাঙছে রফিজুল মণ্ডল, কমলনাথ চৌধুরী, বদরুদ্দিন মালিতাদের ভিটে। আনার মতো নতুন করে ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে রয়েছেন তাঁরাও। সকলেই কমবেশি চাষের সঙ্গে যুক্ত। সকলের গলায় তাই একই সুর। তাঁরা জানান, এখনই যদি নদীকে ঠেকানো না যায় তবে, যেটুকুও বা আছে সেও নদীর গর্ভে যাবে।

নবদ্বীপের ইতিহাসের সঙ্গে ভাঙনের সম্পর্ক সেই সতেরো শতকের মাঝামাঝি থেকে। বিভিন্ন সময়ে গঙ্গার গতিপথ বদল এবং নদীর ভাঙনের ফলে নবদ্বীপের মানচিত্র বারবার আমূল বদল ঘটেছে। ১৯৮০ দশক থেকে নতুন ভাবে নবদ্বীপে উত্তর এবং পূর্ব দিকে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙন সমানে চলছে।

গত বছরের অক্টোবর থেকে নবদ্বীপে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের মালিতাপাড়া, কুর্মিপাড়া, চৌধুরিপাড়া গ্রামগুলিতে শুরু হয়েছে ভাঙন। ফলে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকার কয়েকশো পরিবারের মধ্যে।

ইতিমধ্যে কয়েকশো বিঘা চাষজমি, স্কুলবাড়ি, বসতবাড়ি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গায়। ভিটেমাটি হারিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন বহু গ্রামবাসী।

“এক সময় দেড়শো পরিবারের বাস ছিল এখানে। এখন টিকে রয়েছে মাত্র চল্লিশটি পরিবার।’’—কমলনাথ চৌধুরীর গলায় স্পষ্ট ধরা পড়ে হতাশা। তিনি জানান, কয়েক বছর ভাঙন বন্ধ থাকায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। ফের ভাঙন উস্কে দিচ্ছে পুরনো স্মৃতি।

জমিতে আলু, বেগুন, রাঙা আলু, ভুট্টা ফলান বদরুদ্দিন মালিতা। তিনি বলেন, “পাঁচ-ছয় বিঘা আবাদি জমি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে গিয়েছে। যেটুকু আছে তা নিয়ে খুব ভয়ে আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Soil Erosion Nabadwip River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE