Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কাঠের পায়ের দৌড় শেষ, পাকড়াও রহিম

তৈমুরকে পেড়ে ফেলতে পারেনি কেউ। কিন্তু রহিম পাকড়াও হয়ে আপাতত শ্রীঘরে। রবিবার সন্ধ্যায় তাকে পাকড়াও করা হয়। আটক হয়েছে একটি গাড়ি ও ১৫০০ বোতল ফেন্সিডিল। 

পুলিশের জালে। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের জালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২৭
Share: Save:

তৈমুর লঙ্গ ছিলেন খোঁড়া। আর রহিমের ভরসা ছিল তার কাঠের পা। তা নিয়েই পুলিশকে বহু দিন ঘোল খাইয়েছে মাদক পাচার চক্রের অন্যতম পান্ডা রহিম শেখ।

ফারাকের মধ্যে, তৈমুরকে পেড়ে ফেলতে পারেনি কেউ। কিন্তু রহিম পাকড়াও হয়ে আপাতত শ্রীঘরে। রবিবার সন্ধ্যায় তাকে পাকড়াও করা হয়। আটক হয়েছে একটি গাড়ি ও ১৫০০ বোতল ফেন্সিডিল।

রহিমের বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানার গণকর লাগোয়া বাছুরাইল গ্রামে। ২০১১ সালে দুর্ঘটনায় বাঁ পা হারায় সে। তার পরেও কৃত্রিম পায়েই কাজ চলছিল। যে কোনও গাড়ি চালাতে পটু সে। আটক গাড়িটির মালিক তার সঙ্গী। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত তাকে ধরা যায়নি। তৃতীয় এক জনের নামও রহিম পুলিশকে জানিয়েছে।

শিলিগুড়ি থেকে বিহার-ঝাড়খণ্ড এবং গোটা মুর্শিদাবাদ-মালদহ জেলা জুড়ে মাদক কারবারের জাল বিছিয়ে রেখেছিল রহিম আর তার দুই সঙ্গী। এত দিন তাদের নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। বার তিনেক প্রায় ধরা পড়েও শেষ মুহূর্তে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালায় সে। কৃত্রিম পা নিয়েও সে এত ভাল ছুটত যে যারা জানে না তারা বুঝতেও পারত না যে তার একটি পা নেই।

ধৃত একাধিক মাদক পাচারকারীর কাছ থেকে বারবার উঠে এসেছে রহিমের নাম। তার বাড়িও একাধিক বার হানা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু নাগাল পায়নি। রঘুনাথগঞ্জ শহরের ডোমপাড়া এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি। তিন মাস ধরে সেখানেও নজর রাখছিল পুলিশ।

রবিবার সকালেই পুলিশ খবর পায়, একটি গাড়িতে প্রচুর ফেন্সিডিল নিয়ে সন্ধ্যায় উমরপুর হয়ে জঙ্গিপুর-লালগোলা রাজ্য সড়ক ধরে সীমান্তের দিকে যাবে রহিম। সেই মতো বিকেল থেকেই উমরপুরে ঘাঁটি গাড়ে পুলিশ। সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট গাড়ির দেখা মিলতেই তারা পিছু নেয়। জঙ্গিপুরে ভাগীরথী সেতু পেরনোর পরে রহিমও বুঝে যায় যে পিছনে পুলিশ ধাওয়া করছে। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয় সে। কিন্তু এ বার পুলিশ প্রস্তুত হয়েই ছিল। গাড়ি আটকাতে লালগোলার ঠিক আগেই রামপুরা মোড়ের কাছে কৃত্রিম যানজট তৈরি করে পুলিশ। তাতেই আটকে যায় রহিমের গাড়ি। পুলিশ দ্রুত গিয়ে সেটিকে ঘিরে ফেলে। ছ’টি বস্তা বোঝাই ১৫০০ বোতল ফেন্সিডিল সিরাপ উদ্ধার হয়।

পুলিশের দাবি, রাতভর জেরায় রহিম দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের কথা কবুল করেছে। গাড়ির মালিকই হচ্ছে তাদের পান্ডা। সঙ্গে রয়েছে তার এক বন্ধুও। ২০১১ সালে মাদক পাচার সেরে কিষানগঞ্জ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের গাড়ি। গুরুতর আহত হয় সে। তখন এই মালিকই চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। তবে হাঁটু থেকে কাটা পড়ে তার বাঁ পা।

রঘুনাথগঞ্জের আইসি সৈকত রায় জানান, ওই গাড়ি বোঝাই ফেন্সিডিল পৌঁছনোর কথা ছিল লালগোলার কাছে একটি জায়গায়। সেখান থেকে তা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার ছক ছিল।

পুলিশের দাবি, গত তিন মাসে রঘুনাথগঞ্জ দিয়ে পাচারের সময় প্রায় ৪ হাজার বোতল ফেন্সিডিল এবং প্রচুর পরিমাণ মাদক তৈরির কোডাইন মিক্সচার আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩ জন মাদক কারবারিকে। লালগোলা থেকে তাড়া খেয়েই মাদক কারবারিরা রঘুনাথগঞ্জকে পাচারের পথ করে তুলতে সচেষ্ট বলে সন্দেহ পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE