মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দু’দিন ধরে কম্পিউটারে মুখ গুঁজে রয়েছেন তিনি। চোখে-মুখে উদ্বেগ। হবে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন। সেখানে কে যে ধমক খাবে কেউ জানে না।
অন্তত বিগত বৈঠকগুলির অভিজ্ঞতা তেমনটাই বলছে। কিন্তু কে খেতে পারে ধমক? কে কে পড়তে পারে ম্যাডামের রোষানলে? এই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে জেলার পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরে। প্রসঙ্গটা তুলতেই কম্পিউটারের পর্দায় মুখ গুঁজে থাকা অফিসার বলে উঠলেন, “হেব্বি টেনশনে আছি। এ বার কার ঘাড়ে কোপ পড়বে, কে জানে।”
পঞ্চায়েত ভোটের পরে এই প্রথম নদিয়ায় পা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠকের পরে দলের নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন মমতা। অনেকেই মনে করছেন, সেই বৈঠক মোটেও মধুর হবে না। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের দিন থেকে জেলায় ঘটেছে একের পর ঘটনা। তার মধ্যে একাধিক খুনের ঘটনা যেমন আছে, তেমনই রয়েছে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনাও। ফলে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বস্তিতে নেই পুলিশকর্তারাও। রীতিমত ‘টেনশনে’ আছেন বিভিন্ন থানার ওসি এবং আইসি-রাও। পঞ্চায়েত ভোটের দিন এই জেলায় একাধিক তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। পরে খুন হন এক বিজেপি কর্মীও। বিষয়টি নিয়ে যে মুখ্যমন্ত্রী খুশি নন তা বিলক্ষণ জানেন পুলিশের কর্তারা। কৃষ্ণনগর শহরেই খুন হয়েছে দুই যুবক। তবে সব ছাড়িয়ে বিষমদ কাণ্ডে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নেত্রীর রোষানলের সামনে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের। ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন জেলা আবগারি দফতরের কর্তারাও।
গত বার প্রশাসনিক বৈঠকে ঠিক মতো উত্তর দিতে না পারায় বকুনি খেতে হয়েছিল জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তাই ‘টেনশনে’ আছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। অনেকেই মনে করছেন, ধমকের মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে খাদ্য দফতরের কর্তাদেরও। কারণ, ধান কেনা নিয়ে যে নদিয়া জেলায় যে ফড়েরাজ চলছে তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। সব জেলার কর্তাদের নিয়ে এর আগে নবান্নে বৈঠকও করেছিলেন। তার পরেও ফড়ের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। বিষয়টি যে মুখ্যমন্ত্রী ভাল ভাবে নেবেন না, তা সকলেরই জানা।
নানা কারণে ধমক খেতে পারেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারাও। অন্য দফতরের কর্তারাও যে নিশ্চিন্তে আছেন, এমনটা নয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “ম্যাডামের বৈঠকে এ ভাবে আগে থেকে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। কারণ সে ভাবে ছক বেঁধে তিনি এগোন না। কে কোন কারণে বকুনি খেয়ে যাবেন, কিছুই বলা সম্ভব নয়।”
এত দিন মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে উদ্বিগ্ন থাকতেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরাও। কারণ মঙ্গলবার প্রশাসনের বৈঠকের পরে দলের লোকেদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে বিশেষ করে কৃষ্ণনগর উত্তর, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ও নাকাশিপাড়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপির উত্থান এবং পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকায় বামেদের পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নেওয়া লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। সেখানকার নেতা-বিধায়কেরা নেত্রীর রোষের মুখে পড়তেই পারেন।
তবে সবচেয়ে বেশি নজরে থাকবে বোধহয় শান্তিপুর। পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি-খুন, বিষমদে মৃত্যু মিছিলের পাশাপাশি দলের ভিতরকার গোষ্ঠী কোন্দল, দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ যে নেত্রীর কাছে পৌঁছেছে তা জেলা নেতারা জানেন। নেত্রী কী বার্তা দিতে পারেন, সেটাই আঁচ করার চেষ্টা করছেন সকলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy