Advertisement
E-Paper

স্যর, কিছু বলুন প্লিজ

পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারে নেমে হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের হাতে এ যাবৎ গোলাপ ফুল, নিদেনপক্ষে চকোলেট তুলে দিয়ে পুলিশের গাঁধীগিরি কম হয়নি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৩
হেলমেট সচেতনতায় অন্য পদক্ষেপ। জলঙ্গিতে। নিজস্ব চিত্র

হেলমেট সচেতনতায় অন্য পদক্ষেপ। জলঙ্গিতে। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের কর্ডলেস মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বার দুয়েক ঢোঁক গিললেন ভদ্রলোক। তার পর আমতা আমতা করে শুরু করলেন, ‘‘দোষটা আমারই। শিক্ষক হয়ে হেলমেট না চড়িয়েই বেরিয়ে পড়াটা ঠিক হয়নি। এই শিক্ষাটা আমার দরকার ছিল!’’

পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারে নেমে হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের হাতে এ যাবৎ গোলাপ ফুল, নিদেনপক্ষে চকোলেট তুলে দিয়ে পুলিশের গাঁধীগিরি কম হয়নি। কিন্তু অন্তরে ফুল ফোটেনি! দু-এক জায়গায়, দোকান থেকে হেলমেট এনে নগদ টাকাও আদায় করেছে পুলিশ। কিন্তু দমিয়ে দেওয়া গেছে কি?

নাছোড় অভিযানের তালিকায় সংশোধনের শেষ চেষ্টা হিসেবে পুলিশের এই নয়া কৌশলে কতটা কাজ দেয়, এখন দেখার সেটাই।

দিন কয়েক ধরে, জলঙ্গি ব্লকে এই নয়া উদ্যোগ শুরু হয়েছে। মাথায় হে‌লমেট না থাকলেই দাঁড় করানো হচ্ছে বাইক আরোহীকে। তার পর সন্তর্পণে ডেকে নেওয়া হচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড় করানো পুলিশের মাইক্রোফোনের সামনে— ‘‘এ বার দু’কথা বলুন স্যর!’’ অনুরোধটা রাখছেন পুলিশকর্মীরাই। বলতে হচ্ছে— ‘হেলমেট না পরলে কী কী হতে পারে, নিজেই সাধারণ মানুষকে একটু বলুন।’

তাতে কারও গলা কাঁপছে, কারও বা জিভ শুকিয়ে আসছে। মাঘের শীতেও কারও কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বলতে না চাইলে, বড়বাবুর ধমক উপরি পাওনা!

তাই অধিকাংশই ‘আর কখনও হবে না স্যর’ বলেই পাশ কাটানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু জলঙ্গির ওসি বিপ্লব কর্মকার নাছোড়। বার বারই মাইক্রোফোন তুলে দিয়েছেন হেলমেটহীন বাইক চালকের হাতে। বাড়িয়ে দিয়েছেন মাইকের আওয়াজটা।

খালি মাথা, কানে কাঁধ চাপা স্মার্টফোন। মাথা এক দিকে কাত করে কথা বলতে বলতেই বাইক ছুটছে রাজ্য সড়ক ধরে। সেই তালিকায় হঠাৎই উঠে এলেন এক পরিচিত শিক্ষক।

বাইক থামিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল রাস্তার পাশে, ‘‘স্যর, কাজটা তো ঠিক হচ্ছিল না, বলুন দু’কথা।’’

থতমত খেয়ে বাইক দাঁড় করিয়ে ক্ষমা চাইলেন শিক্ষক। কিন্তু নাছোড় ওসির হাত থেকে রক্ষে নেই। পাশে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘‘আপনি হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিচ্ছেন। আজ আপনার পড়ুয়ারাই আপনার মুখেই শুনুক পথ নিরাপত্তা
নিয়ে দু’কথা!’’

ভরা বাজার, চার পাশে তখন অনেক মুখ তাকিয়ে সেই মাইক্রোফোনের দিকে। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে, শেষতক নিজের দোষ স্বীকারই করতে হল শিক্ষককে।

ওসি বিপ্লববাবুর দাবি, ‘‘এই কৌশলটা কাজে দেবে আশা করি। লালগোলা থানায় থাকার সময়ে এই পন্থা নিয়েছিলাম। আর তাতে ফলও মিলেছিল ভাল। এ বার জলঙ্গিতে সেই দাওয়াই দিয়ে দেখা যাক!’’

কাজে যে দিচ্ছে গলির মোড়ের জটলায় কান পাতলেই মালুম হচ্ছে। লিঙ্কন মণ্ডল বলছেন, ‘‘এখন খালি মাথায় বাইক চালালে সবাই সতর্ক করছে, ‘যাও সামনে পুলিশ আছে, তার উপর মাইকে বলতে হবে কিন্তু...।’’

ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান জলঙ্গির উদ্যোগে খুশি। বলছেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। যে ভাবেই হোক মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং মাথায় হেলমেট পরাতে হবে। মাইক ধরিয়ে যদি ভাল ফল মেলে তা হলে সব থানা এলাকায় ওই পন্থাই নেওয়া হবে।’’

Police Awareness Helmet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy