বাপ্পারাজ শেখ। —ফাইল চিত্র।
ঝোপের মধ্যে চিত হয়ে পড়ে রয়েছে বছর তেরোর কিশোরের নিথর দেহ। গলার নলিটা ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে কাটা। সেখান থেকে রক্তের স্রোত গড়িয়ে শুকিয়ে রয়েছে। পরনে স্কুলের জামা, পাশে পড়ে বইব্যাগ।
মঙ্গলবার দুপুরে তেহট্টের নাজিরপুর বিদ্যাপীঠ থেকে প্রায় দু’শো মিটার দূরে খালের পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে মৃতদেহটি দেখতে পান এক খেতমজুর। ঝড়ের গতিতে খবর ছড়ায়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে তেহট্ট থানায় নিয়ে যায়। সোমবার থেকে ছেলে বাপ্পারাজ শেখকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী বাপি শেখ। পাগলের মতো ছুটে যান তিনি। বড় ছেলের দেহ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘‘ক্লাস সেভেনে পড়ছিল ছেলেটা। কচি ছেলে আমার। ওর সঙ্গে কার কী শত্রুতা থাকতে পারে যে, এমন ভাবে ওকে মেরে ফেলল! আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’
এই ঘটনায় শুধু শেখ পরিবার নয়, গোটা এলাকার মানুষ স্তম্ভিত, শোকস্তব্ধ। স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা ছেলে এ ভাবে খুন হয়ে গেল, তাঁরা মানতেই পারছেন না। মঙ্গলবার খুনির শাস্তির দাবিতে নাজিরপুরে প্রায় আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যত দ্রুত সম্ভব কুকুর এনে অপরাধীকে খোঁজা হবে বলে পুলিশ দেয়। তার পরে অবরোধ ওঠে। সন্ধ্যায় নাজিরপুর বাজারের সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাতেও এলাকায় পুলিশ টহল দিয়েছে।বাপ্পার বাড়ি প্রতাপনগর গ্রামে। ভাল ফুটবল খেলিয়ে হিসেবে তার নাম়ডাক ছিল স্কুলে। শিক্ষকেরাও স্কুল টিমের খেলোয়ার হিসাবে তাকে চিনতেন। প্রধান শিক্ষক বনমালী হালদার বলেন, ‘‘বাপ্পা খুব পরিশ্রমী ছেলে ছিল। স্কুলের যে কোনও কাজে ওকে পাওয়া যেত। অপরাধীকে খুঁজে বার করার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।’’
পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার স্কুলে নবীনবরণ ছিল। তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়। বাপ্পাকে স্কুলে বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের অনেকেই দেখেছে। কিন্তু স্কুল থেকে সে আর বাড়ি ফেরেনি। স্থানীয় বাসিন্দা, তেহট্ট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রফিক মালিথ্যা বলেন, ‘‘এইটুকু একটা ছেলে খুন হয়ে গেল! মানতে না পেরেই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ পথ অবরোধ করেছেন।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে ধরা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy