গোলা ভরা ধান রয়েছে। বাড়িতে মজুত নগদ টাকাও। আলু চাষের জন্য জমিও তৈরি। কিন্তু, সার-বীজের অভাবে অনাবাদি পড়ে রয়েছে জমি।
কারণ যার বাড়িতে নগদ টাকা রয়েছে, সবই পুরনো নোট। সে নোট বাজারে অচল। আর যাঁরা ভেবেছিলেন ধান বেচে আলু চাষ করবেন, তাঁরা ধান বিক্রিই করতে পারছেন না। কারণ, আড়তদারদের কাছে নগদ টাকা নেই। ফলে, তাঁরাও ধান কিনতে পারছেন না। ফলে ভরা মরসুমে চরম বিপাকে পড়েছেন কান্দি মহকুমার চাষিরা।
কান্দি মহকুমা মুর্শিদাবাদ জেলার শষ্যগোলা নামেই পরিচিত। মহকুমার কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। বড় নোট বাতিলের জেরে বিপাকে পড়েছেন সব এলাকার চাষিরা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিংহভাগ আমন ধান তোলা হয়ে গিয়েছে। আলুর জমিও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আলু বীজ জমিতে বোনার আগে বেশ কিছু রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয়। সেই সার কিনতে পারছেন না চাষিরা।
বিভিন্ন এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই সমবায় বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ করে
ধান বুনেছিলেন। সাধারণত ছোট-মাঝারি চাষিরা এ ভাবেই চাষ করেন। ধান উঠলে তা বেচে ঋণ শোধ
করে, আলুর বীজ সার কিনে কিছু চাকা হাতে থাকে।
চাষিরা জানাচ্ছেন, সময়ে আলু বুনতে পারলে দ্রুত আলু বেচে ভাল টাকা পাওয়া যায়। এই আলুকে কাঁচা আলু বলে। এর পরে সেই জমিতে ফের একবার আলু চাষ করা যায়। সেই আলু বিক্রি পাশাপাশি হিমঘরে রাখা হয়। এই জেলার আলুর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল প্রতিবেশী নদিয়াও।
অনেকেই আমন ধান তুলে বাড়িতে আনলেও বহু চাষির ধান মাঠেই রয়ে গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ধান তুলেই বা কী হবে? ধান কিনবে কে? আড়়তদাররা জানিয়ে দিয়েছে, তারা এখন ধান কিনতে পারবে না’’ অনেক আড়তদার ধান কিনতে চাইলেও, তারা এখন টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। ফলে চাষিরা তাদের ধান দিতে রাজি হচ্ছে না। কারণ, পরে যদি কেউ নগদে ধান কিনতে শুরু করে সেই আশায় তাঁরা ধান বাড়িতেই মজুত রাখছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানালেন, সময়ে আলু চাষ করতে না পারলে, ফলন মার খাবে। বড়ঞা ব্লকের চাষি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “আমি প্রতি বছর ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। কিন্তু, এ বার এখনও পর্যন্ত আমন ধান খেত থেকে ঘরেই আনতে পারিনি। কারণ, হাতে টাকা কই? ধান কাটার মজুরি দেব কোথা থেকে? ফলে ধান মাঠেই রয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আলু চাষ কবে করতে পারব জানি না।’’
কান্দি ব্লকের বাসিন্দা দীপক মণ্ডলের সমস্যা আবার অন্য। তিনি জানালেন, আলু চাষের জন্য বাড়িতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা মজুত রয়েছে। কিন্তু, সবই পুরনো নোট। সেই নোট এক সঙ্গে বদলানো যাচ্ছে না. আবার ব্যাঙ্কে জমা দিলেও এক সঙ্গে বেশি টাকা তোলাও যাবে না। ফলে, সমস্যা যেন শেষই হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘ওই টাকা দিয়ে যে কী করব. আলুর বাজ-সার যা কী ভাবে কিনব, জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy