Advertisement
E-Paper

সিজার কেস?  দৌড়তে হবে সেই কৃষ্ণনগর

তেহট্ট থেকে করিমপুর, ভায়া, নতিডাঙা— ৩৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তো বটেই, তেহট্টের মহকুমা হাসপাতালেও অস্ত্রোপচার বা সিজার করে প্রসবের কোনও ব্যবস্থা নেই। এক-দু’দিনের বিড়ম্বনা নয়, এ দুর্ভোগ গত পাঁচ মাসের।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৩

ভ্যানরিকশা, টোটো, বরাত ভাল হয়ে নিশ্চয়যান, না হয় হাসপাতাল পৌঁছনো গেল, তার পর?

প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করা মহিলার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে নিশ্চিৎ বরাদ্দ থাকছে আরও অন্তত আশি কিলোমিটার পথ। কেন?

তেহট্ট থেকে করিমপুর, ভায়া, নতিডাঙা— ৩৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তো বটেই, তেহট্টের মহকুমা হাসপাতালেও অস্ত্রোপচার বা সিজার করে প্রসবের কোনও ব্যবস্থা নেই। এক-দু’দিনের বিড়ম্বনা নয়, এ দুর্ভোগ গত পাঁচ মাসের।

তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে সুপার সৈকত বসু নির্বিকার গলায় বলছেন, ‘‘কী করব বলুন, হাসপাতালের এক মাত্র অ্যানাস্থেটিস্ট ছুটিতে। বিকল্প কাউকে জোগাড় করতে পারিনি তো!’’

তেহট্টের আশপাশে আর কোনও সরকারি হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা নেই। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে বছর দশেক আগে মাস কয়েকের জন্য সিজার করা চালু হয়েছিল বটে, তবে, সাকুল্যে মাস দুয়েকের জন্য। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই একই কারনে।

নতিডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালেও সিজার হয় না। অতএব, গন্তব্য সেই কৃষ্ণনগর। কাছাকাছি বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম হাতেগোনা, গাঁয়ের হা-অন্ন মানুষের পক্ষে সেখানে যাওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানালেন, শুধু তেহট্ট হাসপাতালেই প্রতি মাসে অন্তত ৪০ জনের প্রসব হয়। এর ভিতর অন্তত ২৬-২৭ জনের সিজার প্রয়োজন হয়। গত পাঁচ-ছয় মাস সিজার বন্ধ থাকায় এঁদের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ধকল আর ঝুঁকি নিয়ে কৃষ্ণনগর ছুটতে হচ্ছে। পথে কারও অবস্থা জটিল হচ্ছে। বেশ কয়েক জনের পথেই প্রসব হয়ে গিয়েছে। তেহট্ট থেকে কৃষ্ণনগর যাওয়ার রাস্তায় প্রায় ৫৪টি স্পিডব্রেকার রয়েছে। গাড়ি সেখানে এমন লাফায় যে প্রসূতিদের প্রাণ সংশয় হয়।

ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, জেলায় চরমেঘনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যদি কারও সিজার দরকার হয় তা হলে একাধিক বিএসএফ ক্যাম্পের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে তাঁকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে প্রথমে আসতে হবে করিমপুরে। সেখানেও সিজারের ব্যবস্থা নেই। ফলে আবার প্রায় ৮০ কিলোমিটার পার করে তাঁকে যেতে হবে কৃষ্ণনগর।

এত দিন কেন কিছু ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য দফতর? কেন পাঁচ মাস চুপ করে বসে থাকা হল?

জেলার এক স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, ‘‘আমরা এর মধ্যে অনেক বার স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি। কিন্তু ওরাও ব্যবস্থা করতে পারেনি।’’

অ্যানাস্থেটিস্টের অভাব রাজ্য জুড়ে। তবে, এরই মাঝে এক চিলতে আশা বয়ে এনেছে একটি সরকারি চিঠি, স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, কৃষ্ণনগর হাসপাতাল থেকে এক জন অ্যানাস্থেটিস্টকে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন তেহট্টে এসে কাজ করবেন। সেই ভরসাতেই বুক বেঁধেছে নদিয়ার ওই প্রান্তিক জনপদ।

Pregnant Birth Krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy