Advertisement
E-Paper

গাড়ি ধাওয়া করেছিল জনতা

বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো!রবিবার শহরের বুকে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দু’জনকে পিষ্ট করার ঘটনায় ফের এক বার বেআব্রু হয়ে পড়ল মুর্শিদাবাদ ট্রাফিক ব্যবস্থা। অথচ সম্প্রতি ঘটা করে জেলা জুড়ে পালিত হল পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ।

শুভাশিস সৈয়দ ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪১
আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের।নিজস্ব চিত্র

আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের।নিজস্ব চিত্র

বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো!

রবিবার শহরের বুকে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দু’জনকে পিষ্ট করার ঘটনায় ফের এক বার বেআব্রু হয়ে পড়ল মুর্শিদাবাদ ট্রাফিক ব্যবস্থা। অথচ সম্প্রতি ঘটা করে জেলা জুড়ে পালিত হল পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। গাড়ি থামিয়ে পুলিশ পরীক্ষা করছে, চালক মদ্যপ কি না। মিনি ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও গতি আনারও চেষ্টা চলছে। অথচ রবিবারের রাতে বহরমপুর দেখল, ট্রাফিক ব্যবস্থা নয়, গতি বেড়েছে শুধু গাড়িরই।

রাত আটটা নাগাদ ছাই রঙা বোলেরো গাড়িটি বহরমপুরে পর পর দু’জনকে চাপা দেয়। তারপর সাইকেল-সহ মৃত এক জনের দেহ নিয়েই গাড়িটি পড়িমরি ছুটতে শুরু করে বেশ কিছুটা রাস্তা। শিউরে ওঠে সারা শহর। গাড়িটির পিছু নেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু পুলিশের দেখা মেলেনি।

বহরমপুর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মানকরা রেলগেট। সেখানেও পর পর দু’টি গেট ভাঙে গাড়িটি। সেই রাস্তায় পুলিশ ছিল। কিন্তু বেপরোয়া গতি দেখে গাড়িটিকে থামানোর কোনও ঝুঁকি নেয়নি তারা। পুলিশের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে।

এ দিকে, গাড়ি ততক্ষণে ছুটেছে বেলডাঙার দিকে। তখনও মোটর বাইকে গাড়িটির পিছু ধাওয়া করেছে কারা? যাঁরা গোটা ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটতে দেখেছেন। শেষতক শহর পেরিয়ে সেই বোলেরো গাড়িটি আটকে গেল ভাবতা রেলগেটের কাছে। গাড়ির চালক সুরজিৎ হাজরা ও তার সঙ্গী তাপস দাসকে গ্রেফতার করে বেলডাঙা থানার পুলিশ!

তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার পলসণ্ডা অফিস ওই বোলেরো গাড়িটি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে। গাড়িটি চালায় সুরজিৎ। মাসে সে ছ’হাজার টাকার বেতন পায়। রবিবার পাড়ার একজনের মৃত্যুসংবাদ শুনে ওই গাড়ি নিয়ে সুরজিৎ হাজরা তার প্রতিবেশী তাপস দাসকে নিয়ে বহরমপুর শ্মশানে যায়। সেখানে দু’জনে মদ খায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও রবিবার তাপসই গাড়ি চালাচ্ছিল।

মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর কারণেই যে এমন দুর্ঘটনা, সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত। কিন্তু দুর্ঘটনার পরে ওই দু’জন গাড়ি থামাল না কেন? পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’জন এত মদ খেয়েছিল যে, রবিবার ধরা পড়ার পরে তারা ঠিক মতো মনেই করতে পারছিল না, বহরমপুরের ঠিক কোথায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পরে অবশ্য ধৃতেরা পুলিশকে জানায়, দু’টি দুর্ঘটনার পরে শ’খানেক মোটরবাইক তাদের তাড়া করে। সেই ভয়ে তারা গাড়ি দাঁড় করায়নি। তবে রাতে থানাতে দু’জনেই রুটি ও সব্জি খেয়েছে। সোমবার তাদের বহরমপুরে সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক পিনাকী মিত্র দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন ও ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

স্বাভাবিক ভাবেই এমন ঘটনার পরে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলা পুলিশের একাংশের অভিযোগ, শহরে টহল দেওয়ার জন্য বহরমপুর থানায় মাত্র দু’টি গাড়ি রয়েছে। গাড়ি পিছু সাকুল্যে আট লিটার করে পেট্রল দেওয়া হয়। তেলের পরিমাণ ও গাড়ির সংখ্যা না বাড়ালে তাঁরা কী করবেন?

সমস্যার কথা কবুল করছেন জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বিকাশ ভাণ্ডারী বলছেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কম রয়েছে। তার মধ্যে যানজট রুখতে তো সকাল থেকে রাত কেটে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো খুব জরুরি।’’

আরও কত দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়বে? নাহ্, সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

Traffic Police Car Public
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy