ভোটার কার্ড বলছে, বাবা-ছেলে। কিন্তু বছর আঠাশের নাসির শেখের ‘পিতৃত্ব’ স্বীকার করতে রাজি নন কালীগঞ্জের মোলান্দি গ্রামের বাসিন্দা দোয়াবক্স শেখ। উল্টে এ নিয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ ঠুকে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, আদতে বাংলাদেশি নাসির তাঁর ছেলে হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভুয়ো ভোটার কার্ড বানিয়েছেন।
দোয়াবক্স জানিয়েছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভোটার তালিকায় চোখ বোলাতে গিয়ে চমকে যান তিনি। দেখেন, তাঁরই অজান্তে ভোটার তালিকায় তাঁর পরিবারের সদস্য হিসাবে উঠে গিয়েছে এলাকারই যুবক নাসিরের নাম। এরপর তিনি পলাশি পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে অভিযোগ জানান। পুলিশের জেরায় নাসির অবশ্য দাবি করেন, দোয়াবক্সই তাঁর বাবা। এই রহস্যের জট এখনও ছাড়াতে পারেনি পুলিশ। শুধু জানানো হয়েছে, তদন্ত চলছে।
দোয়াবক্সের দাবি, বেআইনি ভাবে নাসিরকে এ দেশের নাগরিকত্ব দিতেই এই কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রামে নাসিরের শ্বশুরবাড়ি। বাংলাদেশ থেকে এসে ও এখানে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। মাঝে-মধ্যে ওর বাবা আর ভাইও বাংলাদেশ থেকে এখানে আসে।’’ নাসির এখন কোথায়, তা নিয়ে শনিবার দিনভর ধোঁয়াশা ছিল। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানান, তিনি নির্মাণকর্মীর কাজ নিয়ে বাইরে গিয়েছেন। তবে কোথায় গিয়েছেন, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি তাঁরা। গোটা দিন চেষ্টার পর সন্ধ্যায় ফোনে পাওয়া যায় নাসিরকে। তিনি জানান, কাজের জন্য এখন কলকাতায় আছেন। বলেন, ‘‘গ্রামের মেয়ে হাসনা খাতুনকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। এ নিয়েই বাবার (দোয়াবক্স) রাগ। এখন শ্বশুরবাড়িতে থাকি। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারি না। তাই বাবা এমন কথা বলছে।’’
নাসিরের বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন তাঁর শ্বশুর আব্দুল কালাম শেখ এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আনসার শেখ। আব্দুল বলেন, ‘‘দোয়াবক্স আমার চাচাতো ভাই। প্রায় ২০ বছর আগে নাসিরকে ও-ই এ গ্রামে নিয়ে এসেছিল। তখন নাসিরের পাঁচ-ছয় বছর বয়স ছিল। ওকে কোথা থেকে এনেছিল জানি না। তবে ওকে ছেলে হিসাবেই মানুষ করেছে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, সম্প্রতি তিনি ও নাসির সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এতেই সিপিএম সমর্থক দোয়াবক্স ক্ষুব্ধ বলে তাঁর দাবি। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য আনসার শেখ বলেন, ‘‘নাসিরকে ছোট থেকে দেখে আসছি। দোয়াবক্স ওকে পালক পিতা হিসাবে বড় করেছে। এখন ও আমাদের গ্রামেরই ছেলে।’’
দোয়াবক্স অবশ্য দাবি করেছেন, ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরির দোষ ঢাকতে তাঁর নামে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এক বাংলাদেশিকে ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন দোষ ঢাকতে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy