সোমবারের ভয়াবহ আগুন মহকুমা শহর রঘুনাথগঞ্জে ফের একবার উস্কে দিল দমকল কেন্দ্র স্থাপনের দাবিকে। দেড়শো বছরের প্রাচীন শহর আজও দমকলহীন। স্থানীয়দের দাবি, বাম আমলে ৩৪ বছর কেটেছে ‘হচ্ছে হবে’র আশ্বাসে। পালাবদলের পরেও গয়ংগচ্ছ ভাব।
অথচ অতীতের কথা বাদ দিলে গত পাঁচ বছরেই বার বার ভয়াবহ আগুনের মুখে পড়েছে শহর। রঘুনাথগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকায় দু’দুবার আগুনে পুড়েছে মার্কেট কমপ্লেক্স। আগুন লেগেছে চিট ফান্ড সংস্থার একটি ভবনে। আগুনে জ্বলেছে নার্সিংহোম। এমনকি জঙ্গিপুর পাড়ে ভাগীরথী সেতুর তলায় গজিয়ে ওঠা একাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সেই সেতু সংস্কারও করতে হয়েছে পূর্ত দফতরকে।
শহরের উপকণ্ঠে গোপালনগর, ফুলতলা, ম্যাকেঞ্জি মোড়ে দুর্ঘটনার পরে জ্বলেছে একাধিক লরি ও বাস। দিন কয়েক আগে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ১৭ টন গ্যাস বোঝাই অসমগামী ট্যাঙ্কার উল্টে আগুনের সেই রুদ্ররূপ এখনও ভোলেনি মানুষ। ভোলেনি দুর্ঘটনার পরে অ্যাম্বুল্যান্সের আগুন লেগে চার জন স্বাস্থ্যকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও।
আগুনের মোকাবিলায় কোথাও ছুটে এসেছেন প্রতিবেশীরা বালতি হাতে, কখনও বালতি নিয়ে আগুন নেভাতে হাত লাগিয়েছে পুলিশ। সব ক্ষেত্রেই ৩৫ কিলোমিটার দূরে ধুলিয়ান থেকে দমকলের গাড়ি আসার আগেই ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে সব। অথচ শহরে দমকলকেন্দ্র থাকলে আগুন লাগলেও তাতে ক্ষতির পরিমাণ কমত, হয়ত এড়ানো যেত প্রাণহানির ঘটনাও।
শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল মণ্ডল বলছেন, “প্রতিটি স্কুলে মিডডে মিল চলে। সর্বত্র এখনও গ্যাসে রান্না চালু হয়েছে তা নয়। স্কুলগুলিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখতে হয় তাই। তা দিয়ে আর যাই হোক আগুন লাগলে তার মোকাবিলা করা অসম্ভব।”
সোমবার একটি পরিত্যক্ত গুদামে আগুন লেগেছে পাশেই পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে। অভিযোগ, এলাকার প্রতিদিনই আবর্জনা জমা হত ওই গুদামের পাশের ফাঁকা জায়গায়। তাতে লাগানো আগুন থেকেই গুদামে আগুন ছড়িয়েছে।
অর্থাৎ আগুন লাগার বিপদ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। কিন্তু তার মোকাবিলার ব্যবস্থা নেই বলেই এ ভাবে শহরে একের পর এক বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের খতিয়ান। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “বর্তমানে পুরশহরে জনসংখ্যা প্রায় ১.২০ লক্ষ। রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের জনসংখ্যাও লক্ষাধিক। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও ভয়াবহতা অন্য শহরের থেকে অনেক বেশি। অথচ দেড়শো বছরের প্রাচীন শহর আজও দমকলহীন।’’ গত চার দশক ধরে বার বার রাজ্য সরকারের কাছে দমকলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুরসভা জমির ব্যবস্থা করে দিতেও চেয়েছে। কিন্তু দমকলকেন্দ্র আর হয়নি।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন জঙ্গিপুরের পূর্ত ও সড়ক দফতর। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই উমরপুরে ৪৯ শতক জমি রয়েছে তাদের। সেই জমিরই ৩৪ শতক হস্তান্তর করা হয়েছে দমকল দফতরকে।
দফতরের সহকারী বাস্তুকার নির্মল মণ্ডল বলেন, “ওই জমিতে দমকলকেন্দ্র হওয়ার কথা। প্রস্তুতি চলছে।” কিন্তু সে প্রস্তুতি গনগনে হয়ে ওঠার আগেই আঁচ পড়ে যায় কিনা সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy