Advertisement
E-Paper

ভরা আশ্বিনে বৃষ্টিই অসুর

বৃষ্টি অসুরকে বধিবে কে? কখনও ঝমঝম, কখনও ঝিরঝির। এই রোদ, তো এই বৃষ্টি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

বৃষ্টি অসুরকে বধিবে কে?

কখনও ঝমঝম, কখনও ঝিরঝির। এই রোদ, তো এই বৃষ্টি।

সকালে ঝলমলে রোদ দেখে সপরিবার দুর্গা বারান্দা থেকে নেমে এসেছিলেন রাস্তার পাশে। আধঘণ্টার মধ্যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। তড়িঘড়ি প্রতিমা ঘরে তুলতে গিয়ে সিংহের লেজ ভেঙে, অসুরের নাক ছড়ে সে এক হইহই কাণ্ড।

সাতসকালে চাঁদার রসিদ হাতে বেরিয়েছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু পাড়ার কয়েকটি বাড়ি চক্কর দিতে না দিতেই আকাশে ঘন কালো মেঘ। মুখ ভার ব্যবসায়ীদেরও। পুজোর মুখে এমন সৃষ্টিছাড়া বৃষ্টি কার-ই বা ভাল লাগে!

বহরমপুর থেকে বাদকুল্লা, নবদ্বীপ থেকে নাটনা, করিমপুর থেকে কান্দি কিংবা জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর, প্রশ্ন একটাই—এই বৃষ্টি অসুরকে বধিবে কে? দুয়ারে দুগ্গা। হাতে সময় আর বেশি নেই। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এমনিতেই কাজ অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে। এখনও যদি আকাশ মুখ ভার করে থাকে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। করিমপুরের মহেশেরপাড়ার মৃৎশিল্পী ধর্মরাজ মালাকারের কারখানায় হাঁটু জল জমে গিয়েছিল। সেখানেই কোনও মতে কাজ করছিলেন তিনি। ব্যাজার মুখে বলছেন, ‘‘ভরা শরতেও যে বৃষ্টি এ ভাবে ডোবাবে কে জানত!’’

বৃষ্টি ও বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রর্তার কারণে রং শুকোচ্ছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে পোশাক ও গয়নার কাজ। বহরমপুরের অনেক প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার পরে রং করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির ভয়ে সেই প্রতিমাও পড়ে থাকছে কারখানাতেই। এমন অবস্থায় কেউ কেরোসিনের ‘ব্লু ল্যাম্প’, কেউ গ্যাসবাতি জ্বালিয়ে, কেউ আবার লোহার শিকের মধ্যে মালার মতো ঘুঁটে পুড়িয়ে প্রতিমা শুকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শিল্পীরা জানাচ্ছেন, রোদের কাজ কী এ ভাবে সম্ভব নাকি!

বেলডাঙার মহুলা এলাকার প্রতিমা শিল্পী বাঁকারায় দাস এ বার ১৭টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ভয়ে অনেক পুজো কমিটি প্রতিমা নিয়ে যায়নি। সেই সব প্রতিমা রং করতে হবে মণ্ডপে গিয়ে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে প্রতিমা মণ্ডপে না নিয়ে যাওয়ায় কাজের চাপ বেড়ে যাবে অন্তিম লগ্নে। একই বক্তব্য বহরমপুরের ঘাটবন্দর এলাকার প্রতিমা শিল্পী তাপস দাস ও খাগড়ার স্বর্গধাম এলাকার শিল্পী অসীম পালের।

যে শিল্পীদের স্থায়ী কারখানা নেই, তাঁদের তার্পোলিন টাঙিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সেখানে সমস্যা আরও বেশি। জল চুঁইয়ে পড়ছে প্রতিমার উপরে। এই কারণে গোরাবাজার নবারুণ সমিতির কর্তারা কারখানা থেকে প্রতিমা আগাম নিয়ে চলে এসেছেন মণ্ডপে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। নবারুণ সমিতির সম্পাদক অতীশ সিংহ বলেন, ‘‘আগাম প্রতিমা নিয়ে এসেছি ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির কারণে মণ্ডপের কাজও থমকে রয়েছে।’’

মণ্ডপ শিল্পী অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘বৃষ্টির কথা মাথায় না রেখে যে সব মণ্ডপের বাইরের দিকে মাটি, ড্রইং ও পোস্টারের কাজ রয়েছে সেখানেই ভোগান্তিটা বেশি।’’ বৃষ্টিতে পোশাক, জুতো, প্রসাধন সামগ্রী— সব কিছুরই বাজার মন্দা। স্বর্ণময়ী এলাকার অভিজাত বস্ত্র ব্যবসায়ী সুজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টির কারণে গত তিন দিনে স্বাভাবিক দিনের সিকি ভাগ ক্রেতাও আসেননি।’’

মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙা দিশারী সঙ্ঘের এ বারের বাজেট একুশ লক্ষ টাকা। উদ্যোক্তাদের অন্যতম স্বাগত দাস জানান, বৃষ্টির কারণে খরচের ধাক্কাটা বহু গুণ বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত নবদ্বীপ মণিপুরের পুজোর উদ্যোক্তারাও। শহরের অন্যতম জনপ্রিয় থিম পুজো এখানেই হয়। মাস দেড়েক ধরে খোলা আকাশের নিচে চলে প্রস্তুতি। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে উদ্যোক্তারা মাথার উপরে অস্থয়ী ছাদ তৈরি করছেন। ফলে পুজোর বাজেট এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

কান্দিতে দীর্ঘ দিন ধরে কুমোরটুলির দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। খোলা আকাশের নীচে অথবা নিজেদের উদ্যোগে কোনও মতে ত্রিপল টাঙিয়ে প্রতিমা তৈরি করতে হয়। ফলে এই বৃষ্টিতে ভোগান্তির অন্ত নেই। শিল্পী সঞ্জয় পাল বলছেন, ‘‘সব মিলিয়ে পাঁচটি প্রতিমা তৈরির বরাত নিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি কাজও শেষ করতে পারিনি।’’ ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, ইদের পরে বাজারটা সবে জমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃষ্টিটাই পণ্ড করে দিল!

Rain puja durga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy