Advertisement
১০ জুন ২০২৪
TMC

বিধি ভাঙা সমাবেশ, শাসক দলের সাত খুন মাফ!

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে করোনার ছায়া সব থেকে প্রলম্বিত। কিন্তু তৃণমূলের সভা সমাবেশের বিরাম নেই। এবং তা দূরত্ব বিধির তোয়াক্কা না করে।

ভিড়ে ভরা সভা। নিজস্ব চিত্র

ভিড়ে ভরা সভা। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

কোভিড রুখতে বাতিল হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের সমাবেশ। প্রায় নিত্যদিন দূরত্ববিধি কিংবা ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে চলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের সে সবে বুঝি আমল না দিলেও চলে। প্রশ্ন করলে উত্তর আসে— আরে এ তো রাজ্যের শাসক দলের সভা, ভিড় তো হবেই।

এ ব্যাপারে প্রশাসন এবং পুলিশের দেখেও চোখ বুজে থাকার প্রবণতা সমাবেশের ঘনঘটা ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে বলে বিরোধীদের দাবি। মুর্শিদাবাদের এক কংগ্রেস নেতার টিপ্পনী, ‘‘করোনার কিন্তু কোনও দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আছে, এমন অভিযোগ নেই, ফলে তৃণমূল এবং তার দলীয় নেতা-কর্মীদের ছাড় দেবে এমন সম্ভাবনা নেই, কথাটা শাসক দলের কর্তাব্যাক্তিরা বুঝতে পারলে তাঁদেরই মঙ্গল।’’ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে করোনার ছায়া সব থেকে প্রলম্বিত। কিন্তু তৃণমূলের সভা সমাবেশের বিরাম নেই। এবং তা দূরত্ব বিধির তোয়াক্কা না করে। গত সাত দিনে এই মহকুমায় তৃণমূলের পরপর সাত সাতটি প্রকাশ্য সভা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ নীরব। আলগোছে জানাচ্ছে, সভার অনুমতি তাদের কাছে নেওয়া হয়নি। তা হলে তা অনুষ্ঠিত হল কী করে? কী করেই বা সভায় মোতায়েন থাকল পুলিশ? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন,‘‘অতিমারি আইনে যে কোনওরকম জমায়েত নিষিদ্ধ। ইদ, শ্রাবণী উৎসব, জন্মাষ্টমী বন্ধ হয়ে গেল সব। শুধু চালু থাকল তৃণমূলের সমাবেশ। অথচ দেখুন, বিরোধীরা পাঁচ-সাত জনকে নিয়ে ডেপুটেশন দিতে গেলে জেলা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে। এই পক্ষপাতিত্বটুকু না করাই বাঞ্ছনীয় ছিল।’’ সিপিএমের দাবি, জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের সচ্চিদানন্দ কান্ডারী ও রাজ্য কমিটির সদস্য জামির মোল্লার বিরুদ্ধে অতিমাতি আইনের নোটিশ ধরানো হয়েছে। অথচ ১০ থেকে ১৬ অগষ্ট পর্যন্ত জঙ্গিপুরের পুলিশ তৃণমূলের সভায় কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। ওই সব সভায় কোনওটিতে হাজির ছিলেন শাসক দলের মন্ত্রী, কোনওটিতে দলের বিধায়ক ও জেলা নেতারা। কোথাও সামাজিক দূরত্ব বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ।

বিজেপির (উত্তর) মুর্শিদাবাদ জেলার সহ-সভাপতি গৌড় সিংহ রায়ের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির দশ, বিশ জনের জমায়েতও করতে দেওয়টা হচ্ছে না। অথচ তৃণমূল প্রকাশ্যে জনসভা করছে। শাসক দল বলে কি তাদের সাত খুন মাফ?’’

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলকেই কোথাও কোনও সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ যদি সভা করে থাকে তবে সংশ্লিষ্ট থানার কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হবে।’’ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্য সভা হয়েছে শমসেরগঞ্জে ৪টি ১০ থেকে ১৪ অগষ্টের মধ্যে, ফরাক্কায় একটি, রঘুনাথগঞ্জে একটি এবং রবিবার সভা হয়েছে জঙ্গিপুরের পিয়ারাপুরে। কোনও ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি ছিল না বলেই জানা গিয়েছে।

জঙ্গিপুরের পিয়ারাপুরের সভায় হাজির ছিলেন মন্ত্রী জাকির হোসেন ও দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান। দায় এড়িয়ে দু’জনেই বলেন, ‘‘সভা যারা ডেকেছে এ ব্যাপারে তারাই যা বলার বলবে।’’ শাসক দলের জেলা সভাপতি হয়েও আপনার তা হলে কোনও দায় নেই? আবু তাহের কথা বাড়াননি। দলীয় সভার অন্যতম উদ্যোক্তা রঘুনাথগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আখরুজ্জামানের সাফাই, ‘‘এটা বড় কোনও সভা ছিল না। বিজেপি ও সিপিএমের এলাকার বহু নেতা ও কর্মী তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তাদের আবেদন মঞ্জুর করে জেলা সভাপতি নিজে হাজির ছিলেন সভায়। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই সভা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE