E-Paper

মুকুটে ভরসা, গুরুত্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত মমতার 

রাজ্যে যখন পরিবর্তনের হাওয়া, সে সময় থেকে রানাঘাট ছিল তৃণমূলের দুর্গ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে মতুয়া গড়ে তৃণমূলের লাগাম আলগা হতে শুরু করে।

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৮:০৫
মুকুটমনি অধিকারী।

মুকুটমনি অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে লড়ার টিকিটও পান। তবে বাজিমাত করা হয়নি মুকুটমণি অধিকারীর। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই প্রশ্নের উত্তর বোধহয় দিয়ে দিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কালীঘাটে ডাকা বৈঠকে মমতা রানাঘাটে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মুকুটমণি অধিকারীর গুরুত্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার কালীঘাটে দলের জয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন বিভিন্ন জেলার নেতারা। সূত্রের খবর, দলের অনেক নেতাই যেখানে তিরষ্কৃত হয়েছেন, সেখানে রানাঘাটে মুকুটমণির লড়াইয়ের প্রশংসা করেন মমতা। এ বারের নির্বাচনে হেরে গেলেও আগামী দিনে মুকুটমণিকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রাজ্যে যখন পরিবর্তনের হাওয়া, সে সময় থেকে রানাঘাট ছিল তৃণমূলের দুর্গ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে মতুয়া গড়ে তৃণমূলের লাগাম আলগা হতে শুরু করে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে খোদ দলনেত্রী শান্তিপুরে প্রশাসনিক সভায় এসে আমজনতার কাছে সমর্থন চেয়ে গিয়েছিলেন রানাঘাটের জন্য। নির্বাচনের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। মতুয়া সমাজে বিজেপির অন্যতম পোস্টার বয় মুকুটমণির যোগদানে মতুয়া গড়ে বিজেপিকে অনেকটাই ধাক্কা দেওয়া যাবে বলে আশাবাদী ছিল তৃণমূল। তবে শেষ হাসি হাসে বিজেপি‌ই। একমাত্র নবদ্বীপ ছাড়া বাকি ছয়টি বিধানসভা আসনে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। উপ-নির্বাচনে জিতলেও শান্তিপুরে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। বড় ব্যবধানে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে মুকুটমণির ছেড়ে আসা রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রেও।

গত লোকসভা নির্বাচনের পর একাধিকবার রানাঘাটে তৃণমূলের জেলা স্তরে বদল ঘটেছে। তবুও রানাঘাট লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার ছবি বদলায়নি। একাধিক দাপুটে নেতৃত্বে উপস্থিতি সত্ত্বেও রানাঘাটে কেন বারবার বিপর্যয় এড়ানো যাচ্ছে না সেই প্রশ্ন বারবার উঠছে। অনেকেই এর পিছনে বিজেপি হাওয়াকে দাবি করলেও দলের অভিজ্ঞ এবং দাপুটে নেতারা কেন সেই হাওয়া ঠেকাতে পারছেন না সেই প্রশ্নও উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি ছেড়ে আসা মুকুটমণিকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিতকে অর্থবহ বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাটে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা কারও অজানা নয়। নির্বাচনে তার ছাপ পড়ছে বলে দাবি অনেকের। দলের একাংশের দাবি, এ বার জয়ের অনুকূল পরিস্থিতি ছিল। তবে তা ভোটবাক্স পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়নি। মুকুটমণির দায়িত্ব বাড়লে সেই দ্বন্দ্বে খানিক হলেও লাগাম দেওয়া যাবে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। কারণ, মুকুটমণি দলে নতুন। সব গোষ্ঠীর কাছেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

রানাঘাটে অন্যতম মতুয়া মুখ মুকুটমণি অধিকারী। দীর্ঘদিন ধরে মতুয়াদের নানা কর্মসূচিতেও ছিলেন তিনি। তৃণমূলের একাংশের দাবি, মতুয়া সমাজে মুকুটমণির প্রভাবও রয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বিজেপি সংগঠনে থাকার ফলে এই এলাকায় বিজেপির দুর্বলতাগুলিও তাঁর অজানা নয়। তবে লোকসভা নির্বাচনে দেরে যাওয়ায় আগামী দিনে মুকুটমণির মতো মুখকে দলের সংগঠনে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করা নিয়ে জল্পনা ছিল। এর মধ্যেই দলনেত্রী শনিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আগামী দিনে মুকুটকে দলের সম্পদ হতে চলেছে।

যদিও এ দিনের বৈঠক নিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতাই মুখ খুলতে চাননি। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ বৈঠক। তা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কোনও মন্তব্য করব না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ranaghat Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy