মাস কয়েক আগে নিছক গুজব বলেই উড়িয়ে দেওয়া গিয়েছিল।
এ বার তা যাচ্ছে না।
অন্তত তাঁর দল, কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, ‘আর বোধহয় গুজবে থমকে থাকছে না ব্যাপারটা!’
গত কয়েক দিন ধরেই কান্দির বিধায়ক এবং স্থানীয় পুরপ্রধান অপূর্ব সরকার কলকাতায়। ফোন তেমন একটা ধরছেন না। তবে, ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি যা বলেছেন, তার সারমর্ম— মন্ত্রীত্বের ইঙ্গিত পেলে দলবদলে আর কোনও আপত্তি তাঁর নেই। মুখে অবশ্য বলে গিয়েছেন, ‘‘যাঁরা এই সব গুজব রটাচ্ছেন তাঁরাই বলতে পারবেন, দলবদলের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’ যা শুনে জেলা তৃমমূলের এক নেতা হাসছেন, ‘‘এখনও জানা নেই বললে হয়, কথা তো হয়েই গিয়েছে!’’ কি কথা?
তৃণমূলের এক তাবড় নেতা বলছেন, ‘‘দু’দফায়র অপূর্ব সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ওঁর আগেই, কংগ্রেস ছেড়ে কান্দির যে নেতারা তৃণমূলে এসেছেন, তাঁদের আপত্তির দিকটাও খতিয়ে দেকে একটা সমাধান সূত্রে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
কান্দির উপপ্রধান গুরুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-সহ দলের চার কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই দল বদলানোর ঘোষণা করে কলকাতা পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের কথাতেও আঁচ মিলেছে ডেভিডের দলবদলের।
তবে নাটকটা আরও জমিয়ে দিয়েছেন, পুরসভার বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর দম্পতি— দেবজ্যোতি আর স্বান্তনা রায়।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলবদলের প্রশ্নে তাঁরা পা বাড়িয়ে রয়েছেন। তবে, শর্ত একটাই— অপূর্ব দল ছাড়লে তবেই। এ ব্যাপারে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন, শাসক দলের এক সাংসদ। তবে কি ‘অপহরণে’র পরে ফিরে এসে যিনি অধীর চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেসই তাঁদের আশ্রয়, সেই দেবজ্যোতিও সস্ত্রীক দলবদলের পথে? প্রশ্নটা ঘুরছে, এবং জেলা কংগ্রেসের কপালেও ভাঁজ ফেলেছে।
দেবজ্যোতি-সান্ত্বনা অবশ্য দলবদলের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। বলেছেন, হাইকোর্টের কাজ রয়েছে তাঁদের। সে জন্যই কলকাতায় যাওয়া। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘দেবজ্যোতিদের সঙ্গে আলাদা করে বসেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। তবে ওঁরা একটা শর্ত দিয়ে বসেছেন— অপূর্বকে মন্ত্রীত্ব দেওয়াই নয়, সঙ্গে সান্ত্বনাকে কান্দির পুরপ্রধান করারও দাবি তুলেছেন ওঁরা। দল তা মেনে নিলেই তৃমূলে তাঁদের যাওয়া আটকাবে না।’’ সান্ত্বনা যা শুনে অবশ্য বলছেন, ‘‘কে রটাচ্ছে এ সব, সম্পূর্ণ গুজব। আমরা হাইকোর্টের কাজে কলকাতায় এসেছি।” কান্দির কংগ্রেস সূত্রে খবর, হিজল পঞ্চায়েতটি ছাড়া ব্লকের দশটি পঞ্চায়েত, পুরসভা ও বিধানসভা সবই খাতায় কলমে এখনও কংগ্রেসের দখলে। সে দিক দিয়ে দেখলে, এখনও কান্দি ব্লকে তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। সেখানে ডেভিড তথা অপূর্বর দাপট নিয়েও সংশয় তেমন নেই। তবে, রাজ্যের অন্যত্র এমনকী অধীর চৌধুরীর খাসতালুক বহরমপুর ছিনিয়ে নেওয়ার পরেও ডেভিড তাঁর গড় সামলে রাখবেন, না কি নিজেই বদলে পেলবেন জার্সি— এখন সেটাই দেখার।