Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অবাধেই চলত মাটি-বিক্রি, সব জেনেও চুপ দফতর

পলাশিপাড়ার গোপীনাথপুর গ্রামের কারিগর পাড়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পাড়ার বন্ধুদের জুটিয়ে পুকুর পাড়ে রান্নাবাটি খেলছিল আহেমা খাতুন (১২) ও রিজিয়া খাতুনও (‌১২)।

দেওয়া হয়েছে সতর্কতা। —নিজস্ব চিত্র

দেওয়া হয়েছে সতর্কতা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পলাশিপাড়া  শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৩
Share: Save:

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের স্থানীয় আধিকারিকেরা জানতেন, অবৈধ ভাবে তেহট্ট ২ ব্লকে একের পর এক পুকুর কেটে তার মাটি আশপাশের ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই রকমই একটি পুকুরের পাড়ে ধস নেমে দুই বালিকার মৃত্যুর পরেই দফতরের ব্লক স্তরের একাধিক কর্তা সে কথা স্বীকার করেছেন। অথচ মাটি কাটার এই বেআইনি কাজকর্মের হদিশ পেয়েও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা না-নিয়ে চুপ করে বসেছিলেন বলে অভিযোগ। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তার কোনও যুতসই জবাব দিতে পারেননি আধিকারিকেরা। শেষে তাঁরা ফোন বন্ধ করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের চাপে এবং মাটি মাফিয়াদের ভয়ে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অধিকাংশ কর্তা। মাটি মাফিয়ারা সেই সুযোগে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একের পর এক পুকুর কেটে মাটি তুলে বিক্রির ফলে মাটি ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা ও মৃত্যু।

পলাশিপাড়ার গোপীনাথপুর গ্রামের কারিগর পাড়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পাড়ার বন্ধুদের জুটিয়ে পুকুর পাড়ে রান্নাবাটি খেলছিল আহেমা খাতুন (১২) ও রিজিয়া খাতুনও (‌১২)। আচমকা পাড়ে মাটিতে ধস নামে। মাটির তলায় চাপা পড়ে যায় দুই বালিকা। গ্রামের মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন দু’জনকে টেনে বার করতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। মাটি কাটার যন্ত্র এনে যখন তাদের বার করা হয়, তখন আর সাড় পাওয়া যায়নি।

তেহট্ট-২ ব্লকের ভুমি ও ভুমি সংস্কার আধিকারিক দীপঙ্কর সাহা স্বীকার করেছিলেন, ‘‘রয়্যালটি না-দিয়ে অবৈধ ভাবে ওই জমির মাটি কাটা হচ্ছিল। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁকে শুক্রবার জিজ্ঞাসা করা হয়, দফতর যখন অবৈধ ভাবে পুকুর কেটে মাটি বিক্রির খবর জানত তখন এতদিন ব্যবস্থা না-নিয়ে চুপ করে বসেছিল কেন? দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের না-হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারিনি।’’ অথচ বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরেও কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। কিন্তু ভূমি সংস্কার দফতর স্বত:প্রণোদিত হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। যদি দফতরের সুয়োমোটো অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতা থেকে থাকে তা হলে এত দিন অন্য কারও অভিযোগ দায়েরের জন্য তাঁরা বসে রইলেন কেন? এত দিনে উদ্যোগী হলে হয়তো দুই বালিকাকে মরতে হত না। এ ব্যাপারে দীপঙ্করবাবু আর কোনও উত্তর না-দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।

দুই বালিকার মৃত্যুর পরে টনক নড়েছে প্রশাসনের। শুক্রবার তেহট্ট মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল পলাশিপাড়ার বেশ কয়েকটি ইটভাটা ও বেআইনি মাটি খাদানে অভিযান চালিয়ে তেরো জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছে। যে পুকুরে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে আপাতত না-নামার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

গ্রামের মানুষের অভিযোগ, ওটি বাবু কুণ্ডু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির পুকুর। তিনি পুকুর থেকে অবৈধভাবে কাটা মাটি ইটভাটা-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেননি। ঘটনার পর থেকে বাবু কুণ্ডু এলাকা থেকে উধাও। তাঁর বাড়িও খালি এবং তালাবন্ধ। যদিও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, বাবু কুণ্ডু নামে কারও নামে ওই পুকুর থাকার প্রমাণ মেলেনি। রেকর্ড অনুযায়ী, ওই জমির সাত জন মালিক রয়েছেন। এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, শুধু রায়ত জমিই নয়, রানীনগর রুদ্রনগর, সাহেবনগর, রাধানগর, গোপীনাথপুরের নদীর চরের মাটিও চুরি করে বিক্রি করে দিচ্ছে মাফিয়ারা। দিন রাত অনর্গল মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের যাতায়াতে সকলেই আতঙ্কিত থাকেন। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Soil Tehatta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE