Advertisement
E-Paper

বাপ্পার খুনি স্কুল-দাদারা

শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির দুই প়ড়ুয়া শামিম শেখ ও সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছিল।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৭
বাপ্পারাজ শেখ। —ফাইল চিত্র।

বাপ্পারাজ শেখ। —ফাইল চিত্র।

টাকা চুরি নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। তার জেরেই খালের ধারে ঝোপের মধ্যে ডেকে নিয়ে গিয়ে তেরো বছরের বাপ্পারাজ শেখকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে, তার পর গলার নলি কেটে খুন করেছে তার স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির দুই দাদা।

শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির দুই প়ড়ুয়া শামিম শেখ ও সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে ভেঙে পড়ে অপরাধ স্বীকার করেছে দুই কিশোর। তারা এ-ও জানিয়েছে যে, খুনের ঘটনা জেনে ফেলায় বাপ্পারাজের এক সহপাঠী টিকা শেখকেও তারা গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আর এক ছাত্র ঘটনাস্থলে চলে আসায় তাকে আর মারতে পারেনি। দুই অপরাধী নাবালক হওয়ায় পুলিশ তাদের আইনত গ্রেফতার করতে পারেনি। শনিবার তাদের থানাতেই রাখা হয়। আজ, রবিবার তাদের কৃষ্ণনগর জুভেনাইল কোর্টে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিল নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের ছাত্র বাপ্পারাজ শেখ। মঙ্গলবার স্কুল থেকে দেড়শো মিটার দূরে একটি ঝোপে তার নলিকাটা দেহ মেলে। খুনিকে দ্রুত ধরার দাবিতে পথ অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম থেকেই বলছিল, এটা কোনও পেশাদার খুনির কাজ নয়। অল্পবয়স্ক কয়েক জন এতে জড়িত রয়েছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তারা সকলেই স্কুলের উঁচু ক্লাসের অর্থাৎ একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। শুধুমাত্র গত শুক্রবার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষ পর্যন্ত বাপ্পারাজের দেহ পাওয়ার চার দিন পর খুনের রহস্যের সমাধান করল পুলিশ। নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা নাবালক ও ছাত্র হওয়ায় খুব সতর্ক হয়ে তদন্তের কাজ চালাতে হয়েছে।’’

কেন শামিম আর সাগ্নিক খুন করেছে বাপ্পারাজকে? পুলিশের দাবি, জেরায় তারা জানিয়েছে, টাকা চুরি করার স্বভাব ছিল সাগ্নিক আর বাপ্পার। তা নিয়ে স্কুলে দু’জনের দুর্নামও ছিল। কিন্তু নিকট অতীতে বাপ্পা যে সব চুরির ঘটনায় যুক্ত ছিল তার দায় এসে পড়ছিল সাগ্নিকের ঘাড়ে। এতে খেপে গিয়ে সে বাপ্পারাজকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। এই কাজে সঙ্গে নেয় বন্ধু শামিম শেখকে। পয়লা অক্টোবর স্কুলে নবীনবরণের দিন স্কুলের কমন রুমে বসে খুনের মাস্টারপ্ল্যান ছকে শামিম আর সাগ্নিক। তারা দশম শ্রেণির এক ছাত্র আজিজ শেখকে সাইকেলে করে বাপ্পাকে খালের ধারের জঙ্গলে নিয়ে যেতে বলে। আজিজ উঁচু ক্লাসের দাদাদের নির্দেশ পালন করে। এর পর শামিম ও সাগ্নিক হেঁটে সেখানে পৌঁছোয়। তাদের সঙ্গে ছিল বাপ্পারাজের এক সহপাঠী টিকা শেখ। তারা টিকাকে কেন সঙ্গে এনেছিল এ বিষয়টা পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

পুলিশের দাবি, বিড়ি খাওয়ার নাম করে শামিম আর সাগ্নিক এর পর বাপ্পারাজ ও টিকাকে নিয়ে ঝোপের ভিতর ঢুকে যায়। আজিজকে তারা বাইরে নজর রাখতে বলে। দেরি হচ্ছে দেখে আজিজ ঝোপে ঢুকে দেখে, বাপ্পাকে মাটিতে শুইয়ে গলা টিপে ধরে আছে শামিম, আর টিকার গলা টিপে ধরেছে সাগ্নিক। টিকার হাত পা নড়াচড়া করলেও বাপ্পা তত ক্ষণে নিস্তেজ। আজিজকে দেখে সাগ্নিক তাড়াতাড়ি তার হাতে একশো টাকা দিয়ে টিকাকে ডাক্তার দেখাতে পাঠিয়ে দেয়। কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় আজিজ ও টিকাকে। তার পর বাপ্পার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাগ্নিক তার গলায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয়। দিন কয়েক আগে একাদশ শ্রেণির যে ছাত্রটি পুলিশকে দেখে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালায় সে সাগ্নিকদের পরিকল্পনা জেনে গিয়েছিল বলে খবর।

Death Bapparaj Sheikh Murder Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy