হাতে গোনা ক’টা দিন। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে নবদ্বীপের অন্যতম উৎসব দোল। লাখো মানুষের ভিড় জমবে গঙ্গার তীরের দুই জনপদ— মায়াপুর ও নবদ্বীপে। তার ঠিক আগেই নবদ্বীপের খেয়াঘাটে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় জেটি বসানোর তোড়জোড়।
মায়াপুর-নবদ্বীপ, জোড়া পর্যটন কেন্দ্রের জনপ্রিয়তা এখন আন্তর্জাতিক স্তরের। সারা বছর ধরে গোটা পৃথিবী থেকে ভক্তের দল ছুটে আসেন নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে। রথযাত্রা দিয়ে এখানে পর্যটন মরশুমের শুরু। তারপর পরপর ঝুলন, জন্মাষ্টমী, রাস, দোল উৎসব। সবচেয়ে বেশদিন ধরে চলে দোল উৎসব। পনেরো দিন। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লাখো মানুষের আনাগোনা হয় দোলের নবদ্বীপে। শতাধিক মঠমন্দির থেকে বার হয় পরিক্রমা। এক একদিনে লাখো মানুষ পারাপার করেন গঙ্গা।
এ হেন পর্যটক বহুল উৎসবে নদী পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত জেটির অভাব নিয়ে ক্ষোভ ছিল বহু দিনের। নবদ্বীপে গঙ্গা এবং জলঙ্গি নদী দিয়ে তিনটি রুটে ছ’টি জেটি দিয়ে ফেরি চলাচল করে। নবদ্বীপ ঘাটের দুটি জেটি থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর এবং নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। অন্যদিকে মায়াপুরের হুলোর ঘাট থেকে জলঙ্গি নদীপথে মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নবদ্বীপের দু’টি ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন।
কিন্তু এত দিন প্রতিটি ঘাটেই ছিল একটি করে ভাসমান জেটি। এবং একটি করে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী জেটি। এত দিন নৌকায় ওঠার সময় একটি রুটের যাত্রীরা ভাসমান জেটি দিয়ে উঠতেন। দ্বিতীয় রুটের যাত্রীদের নৌকায় উঠতে হয় বাঁশের মাচা দিয়ে। বর্ষাকালে সেই মাচা যেমন বিপজ্জনক, তেমনই শুখা মরশুমে গঙ্গার জল কমে গেলে গরম বালির উপর দিয়ে হেঁটে নৌকায় ওঠাও ততটাই সমস্যার। উৎসবের সময় তো কথাই নেই। মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে।
এই নিয়ে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উভয় পাড়ের সব ঘাটেই ভাসমান জেটির ব্যবস্থা করতে হবে।
নবদ্বীপ পুরসভা বড়ালঘাটে দ্বিতীয় ভাসমান জেটির ব্যবস্থা করেছে। ইতিমধ্যে কাজ এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। এই দ্বিতীয় জেটি থেকে স্বরূপগঞ্জ ঘাটে অর্থাৎ কৃষ্ণনগরগামী যাত্রীরা উঠবেন। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “আগামী দিনে নবদ্বীপের সবকটি ঘাটেই ভাসমান জেটির ব্যবস্থা করা হবে।”
নদিয়ার সব থেকে বড় খেয়াঘাটটি পরিচালনা করে নবদ্বীপ জলপথ পরিবহন সমবায় সমিতি। সমিতির সভাপতি গোপাল দাস জানান, নবদ্বীপ-মায়াপুর রুটে সাধারণ সময়ে যাতায়াত করে চারটি নৌকা। নৌকাগুলি ৭২ ফুট লম্বা-২২ ফুট চওড়া। এগুলিতে তিনশো লোক উঠতে পারেন। বাকিগুলোর ক্ষমতা ২৫০০ টন। যেখানে আড়াইশো মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। স্বরূপগঞ্জ-নবদ্বীপ ঘাটে চলাচল করে তিনটি নৌকা।