Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Heroin

পোস্ত চাষ দিয়ে হাতেখড়ি, নদিয়ায় শিক্ষক থেকে ছাত্র জড়াচ্ছেন হেরোইন ব্যবসায়, কারবারের ‘কিং পিন’ চাষিরা!

অবৈধ পোস্ত চাষ দিয়ে শুরু। চাষের পদ্ধতি শিখিয়ে নদিয়ার পলাশিপাড়ার কয়েক জন চাষিকে আফিম ব্যবসার দিকে টেনে নিয়ে যায় ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর, খুন্তি-সহ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মাদক কারবারিরা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ
পলাশিপাড়া  শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩০
Share: Save:

দিন কয়েক আগে হেরোইন কারবারে গ্রেফতার হয়েছেন এক স্কুলশিক্ষক। ছাত্র থেকে শিক্ষক, চাষি থেকে বেকার যুবক, আন্তঃরাজ্য মাদক কারবারে নদিয়ার এমন কিছু মানুষ জড়িয়েছেন, যা বিস্মিত করছে পুলিশকেও। কী ভাবে বাংলার নদিয়া থেকে ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর, খুন্তি এলাকার হেরোইন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হল, তার তদন্ত করতে গিয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ সব তথ্য পাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, অবৈধ পোস্ত চাষ দিয়ে শুরু হাতেখড়ি। চাষের পদ্ধতি শিখিয়ে নদিয়ার পলাশিপাড়ার কয়েক জন সাধারণ চাষিকে আফিম ব্যবসার দিকে টেনে নিয়ে যায় ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর, খুন্তি-সহ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মাদক কারবারিরা। পোস্ত চাষের বিপুল লাভ স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের মাদক কারবারিদের যোগসূত্র তৈরি করে। সেই শুরু। এখন নদিয়ার স্থানীয় যুবকদের হেরোইন আসক্তির নেপথ্যেও ঝাড়খণ্ড যোগ পাচ্ছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ভিন্‌রাজ্যের পাণ্ডাদের পরামর্শ মতো স্থানীয় এলাকায় মাদক কারবার পর্যন্ত শুরু করেছেন ওই যুবকেরা।

নগদ মুনাফা বাড়িয়ে দিয়েছে লোভ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে শিক্ষকের পেশায় যিনি রয়েছেন, তিনিও জড়াচ্ছেন এমন অপরাধচক্রে। পুলিশ জানাচ্ছে, সালটা ২০০৯। ঝাড়খণ্ড থেকে শ্রমিক এনে গোপনে পলাশিপাড়ার কিছু জমিতে পোস্ত চাষ শুরু হয়। তখন থেকে পুলিশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় পলাশিপাড়া থানা এলাকা। কয়েক শতক জায়গায় শুরু হয়েছিল পোস্ত চাষ। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে ক্রমে কয়েকশো বিঘা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পোস্ত চাষ। পরে পুলিশি অভিযানে পোস্ত চাষ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে শুরু হয় আর এক অবৈধ ব্যবসা।

পোস্তের আঠা হেরোইনের অন্যতম কাঁচামাল। তার বিনিময়ে বড় নলদহ, বাউর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে হেরোইন এনে বিক্রি করা শুরু করেন কয়েক জন। ক্রমশ ওই এলাকার বেশ কয়েক জন নিজেরাই হেরোইন তৈরি করা শুরু করেন। ওই যোগসূত্র কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের ‘কারিগরদের’ দিয়ে স্থানীয় এলাকায় হিরোইন তৈরি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দেড় দশক পার করে রাজ্যের অন্যতম হিরোইন তৈরির ভরকেন্দ্র এখন নদিয়ার পলাশিপাড়া এলাকা! যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে।

দিন কয়েক আগে হেরোইন কারবারের অভিযোগে পলাশিপাড়া থানার বড় নলদহ গ্রামের এক প্রাথমিক শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এলাকার আরও দুই যুবকের নাম পান তদন্তকারীরা। উঠে আসে ঝাড়খণ্ড যোগের কথা। পুলিশ সূত্রে খবর, এর পর চক্রধরপুর থেকে দুই ‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে দু’টি নাম। সুনীল সামার এবং মঙ্গল সামার। এঁরা খুন্তি থেকে পলাশিপাড়ার হেরোইনচক্রের কারবার চালাতেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ওই দু’জনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘হেরোইনের আন্তঃরাজ্য কারবার নিয়ে নানা তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মাদক কারবারে বেশি অর্থ উপার্জনের লোভে বেআইনি কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। তবে আমরা যে ভাবে অভিযান চালাচ্ছি, তাতে অচিরেই এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, এই চক্রের সঙ্গে অন্য রাজ্যের যোগ রয়েছে। বেশ কয়েক জনের নামও পাওয়া গিয়েছে। সেই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। ধৃতদের জেরা চলছে। এই কাঁচামাল কোন পথে আসত, তা নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অভিযান চালাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Heroin Drug Trafficking Nadia Drug Peddlers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE