জোরকদমে: পুজোর প্রস্তুতি চলছে। নিজস্ব চিত্র
কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠেছিল ভরত মণ্ডলের। দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে পাড়ার জনাকয়েক কিশোর। হাতে চাঁদার রসিদ।
—‘কাকু, ৫১ টাকা কিন্তু দিতেই হবে।’
—‘কেন? এখন আবার কী রে?’
—‘সরস্বতী পুজো। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খিচুড়ি। টানা তিন দিন বিরাট হইহই ব্যাপার।’
বছর পঞ্চাশের ভরতবাবু জোর বিষম খেয়েছিলেন। অবশ্য ভরা চৈত্রে সরস্বতী পুজোর কথা শুনলে কে না বিষম খাবেন! তাই বলে তিনি কিন্তু ছেলেদের ফিরিয়ে দেননি। একটু ধাতস্থ হয়ে তিনিও চাঁদা দিয়েছেন। চাঁদা দিয়েছেন পাড়ার সকলেই। সেই চাঁদার টাকা দিয়েই সাহেবনগর উত্তরপাড়ায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে অকাল সরস্বতী পুজো। শিল্পীকে দিয়ে মূর্তি গড়া হয়েছে। ঘটা করে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চও বাঁধা হয়েছে। কিন্তু এই অসময়ে সরস্বতী পুজো কেন?
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা উজ্জ্বল মণ্ডল, শৌভিক মণ্ডলেরা জানাচ্ছে, প্রতি বছর তারা বেশ ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো করে। এ বারেও সে ইচ্ছে ছিল ষোলো আনা। কিন্তু পুজো ছিল ১ ফেব্রুয়ারি। মাধ্যমিক শুরু হয়েছে তার ঠিক দু’দিন পরে। আর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। নিট ফল, অভিভাবকদের প্রবল আপত্তি এবং পুজো বন্ধ।
উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে সবাই মিলে ঠিক করি, সরস্বতী পুজো করব। মাঘ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চমী তিথি তো সব মাসেই আছে। সেই মতো পুরোহিতের সঙ্গে আলোচনা করে সকাল সকাল স্নান সেরে সবাই অঞ্জলিও দিয়েছি।’’
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রঞ্জিত মণ্ডল, বিশ্বম্ভর মণ্ডল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুস্মিতা মণ্ডল, সুপ্রিয়া মণ্ডলেরা বলছে, ‘‘পরীক্ষার জন্য এ বার পুজোতে কোনও আনন্দ করতে পারিনি। পুজোর ক’দিনও মুখ গুঁজে লেখাপড়া করেছি। এখন সবাই মিলে জমিয়ে আনন্দ করছি।”
পুরোহিত মিন্টু চক্রবর্তী জানান, যবের শিষ, পলাশ ফুল কিংবা কুলের মতো কিছু উপকরণ এই সময় মেলেনি। তবে নিষ্ঠার কোনও ঘাটতি ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম মণ্ডল বলছেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা বলছে, পরীক্ষার কারণে ওরা পুজো করতে পারেনি। কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। পড়াশোনা করলেই তো তাঁর পুজো করা হয়। ফলে পরীক্ষার সময় মন দিয়ে লেখাপড়া করে ওরা আসলে সরস্বতীরই পুজো করেছে। এ বার প্রতিমা এনে পুজো করল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy