Advertisement
E-Paper

‘মা, শিগগির পাঁচ হাজার টাকা পাঠাও!’

মালয়েশিয়ায় যাওয়া হবে না। এখন বাড়ি ফিরে গেলে, সব যাবে। যে করে হোক আমায় টাকা পাঠাও।’

সৌমিত্র সিকদার 

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মোবাইল ফোনটা বাজছিল। অচেনা নম্বর।

ফোন ধরতেই ভেসে এল ছেলের গলা— ‘মা, আমি মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পঞ্জাবে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আরও পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। তা না হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়া হবে না। এখন বাড়ি ফিরে গেলে, সব যাবে। যে করে হোক আমায় টাকা পাঠাও।’

গত সোমবার দুপুরে পঞ্জাব থেকে চাকদহের রসুল্যাপুরের বাড়িতে মাকে মোবাইলে ফোন করে বছর আঠাশের সমীর রায়। ফোন পেয়ে দিশেহারা সমীরের মা দীপ্তি রায়। তিনি বলেন, “সোনার গয়না বাঁধা দিয়ে সুদে টাকা নিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। দালালকে দিয়েছি ৮৫ হাজার টাকা। ছেলের হাতে দিয়েছি আরও ১৫ হাজার। এখন আবার পাঁচ হাজার টাকা চাইছে। কোথায় পাব এত টাকা! এদের যা ভাবগতিক দেখছি, তাতে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে।”

চাকদহ ব্লকের দেউলি গ্রাম পঞ্চায়েতে রসুল্যাপুর বাজারে রাস্তার ধারেই সমীরদের বাড়ি। তারা এক ভাই, দুই বোন। দিদিদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সমীরের বাবা অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন। মারা গিয়েছেন এক দিদিও। বাড়িতে রয়েছেন মা। অনেক কষ্টে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেছিলেন সমীর। আর কোনও কাজ না পেয়ে তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বেশি উপার্জনের আশাতেই তিনি মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন। এজেন্ট তাঁকে জানিয়েছেন, সেখানে প্যাকেজিংয়ের কাজ রয়েছে। প্রতি মাসে তিরিশ হাজার টাকা পাবেন। থাকার জায়গাও দেওয়া হবে। তবে খাওয়ার খরচ তাঁর নিজের।

গত শনিবার সমীর মালয়েশিয়ার উদেশে রওনা হয়েছিলেন। সঙ্গে যান তাঁর আরও দুই প্রতিবেশী উজ্জ্বল বালা ও প্রবীর সরকার। এখান থেকে ওই তিন জনই প্রথম পঞ্জাবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তাঁদের পঞ্জাবে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁরা সেখানেই।

উজ্জ্বলের ভাই সজল বালা বলেন, “এর আগে এক বার দুবাইয়ে গিয়েছিল দাদা। সেখান থেকে ফিরে এ বার মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এত টাকা খরচ করে পাঠালাম। কিন্তু যা শুরু হয়েছে, তাতে বুঝতে পারছি না কী হবে।” তাঁর অভিযোগ, উজ্জ্বলের মোবাইল আটকে রাখা হয়েছে। সেটি চাইতে গেলেই তাঁকে মারধর করা হচ্ছে।

বছর সাতাশের প্রবীর সরকার আগে দিনমজুরের কাজ করতেন। তিনিও বেশি রোজগারের আশায় মালয়েশিয়া রওনা হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রীনা সরকার বলেন, “সকলের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে আমার মা ওকে পাঠিয়েছ। এখন বলছে, আরও ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আর টাকা কোথায় পাব? এ সব শোনার পরে আর কেউ টাকা ধার দিতে চাইছে না!”

পরিবারগুলির দাবি, দীপক রায় নামে স্থানীয় এক জনের মাধ্যমে ওঁদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। দীপক বলেন, “ওরা যাবে বলেছিল। তাই পঞ্জাবের এক জনের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। তার মাধ্যমেই ওরা গিয়েছে। আমি যত দূর শুনেছি, ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার কারণে ওদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কিছু টাকা লাগবে। সেই টাকা ওদের কাছে চাওয়া হয়েছে। ওদের আবার মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে।”

হাঁসখালি থেকে যে আট জন আফ্রিকা গিয়ে তানজানিয়ার জেলে বন্দি হয়েছেন, তাঁদেরও ভিসা নিয়েই সমস্যা হয়েছিল। চাকদহের বিডিও পুষ্পেন মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেউ প্রশাসনকে জানিয়ে বিদেশে যায় না। নিজেরাই যায়। তবে এ ব্যাপারে কেউ সমস্যার কথা জানালে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়।’’

Fraud Crime Chakdaha চাকদহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy