Advertisement
E-Paper

দোলে ‘মহাপ্রভু ভান্ডারা’য় পিৎজ়া-পাস্তাও

তেরো পার্বণের নবদ্বীপে দোল উৎসব অনেক দিন ধরেই স্বতন্ত্র উপস্থাপনার ‘প্রসাদ’ গুণে। বহিরাগত পর্যটক থেকে স্থানীয় মানুষ, শুধু একবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই হল।

দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ঘরের জন্য গোপাল কিনতে দোকানে।

দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ঘরের জন্য গোপাল কিনতে দোকানে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:১৯
Share
Save

খিচুড়ি পায়েসের পাশে পিৎজ়া-পাস্তা। কিংবা স্যালাডের পাশে সরবত। দোলের নবদ্বীপে রকমারি সুখাদ্যের সমাহার।

দোলে নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমায় অংশ নেওয়া দেশ-বিদেশের লাখো ভক্তের জন্য বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের তরফে এমনই নানা পদের আয়োজন রাখতে হয়। দোলের দিন পনেরো আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পরিক্রমা। কোনও পরিক্রমাতেই হাজারের কমে লোক হয় না। বড় মঠ-মন্দিরের পরিক্রমায় সেই সংখ্যাটা দশ থেকে পনেরো হাজার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। খাবারের এমন বাহার পরিক্রমায় অংশগ্রহণকারীদের জন্যই।

কিন্তু একই পথের পরিক্রমায় ভিন্ন পদের আয়োজন কেন?

উত্তরে মায়াপুরের ইসকন থেকে নবদ্বীপের কেশবজী গৌড়ীয় মঠ কিংবা দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের প্রধানের একই সুর। সকলেই জানালেন, নানা অঞ্চলের মানুষের নানা ধরনের খাদ্যাভ্যাস। তাই পাশাপাশি পাতে পড়ছে ভিন্ন পদ। হিন্দি বলয়ের ভক্তরা যেখানে চাপাটি-রুটি-সব্জিতে অভ্যস্ত। সেখানে বাঙালি ভক্তদের পছন্দ অন্ন। আবার বিদেশিরা ফল, স্যালাড, চাউ, পাস্তা-পিৎজ়ায় স্বচ্ছন্দ।

পরিক্রমার দিনগুলোয় সকালের জলখাবারে সকলের জন্যই খিচুড়ির ব্যবস্থা। মধ্যাহ্নে সাদা ভাতের সঙ্গে ডাল, সব্জি, পায়েস। বিদেশি ভক্তদের জন্য ওই সময় কোনওদিন চাউমিন, কোনওদিন পিৎজ়া বা পাস্তা দেওয়া হয়। সঙ্গে বেকড ব্রেড। আবার হিন্দি অঞ্চলের মানুষের জন্য সব্জির সঙ্গে তন্দুরি রুটি বা চাপাটি। তবে রাতে বিদেশিরা কিছুই খেতে চান না। একটু ফল বা দুধ। তবে দেশীয় ভক্তদের জন্য রাতেও অন্নের ব্যবস্থা থাকে।

তেরো পার্বণের নবদ্বীপে দোল উৎসব অনেক দিন ধরেই স্বতন্ত্র উপস্থাপনার ‘প্রসাদ’ গুণে। বহিরাগত পর্যটক থেকে স্থানীয় মানুষ, শুধু একবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই হল। অমনি হাতে চলে আসবে খিচুড়ি, সব্জি, আলুরদম, লুচি, পোলাও, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। কোথাও বসিয়ে খাওয়ানো, কোথাও আবার পাত্রে করে হাতে হাতে দেওয়া হচ্ছে খাবার। সকাল থেকে রাত মানুষকে পেট ভরে সুস্বাদু প্রসাদ খাইয়ে দোলযাত্রা উদযাপন নবদ্বীপের নতুন প্রবণতা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহাপ্রভু ভান্ডারা।’

অন্য সব জায়গায় দোলের সকাল যখন নিছক একটা রঙিন ছুটির দিন। নবদ্বীপে তা শহরের সবথেকে বড় উৎসবের শেষ দিন। দোল পূর্ণিমায় চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথিতে তাঁর জন্মভূমি নবদ্বীপে লাখো মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। ‘ঘরের ছেলের’ জন্মতিথি উদযাপনে যত অতিথি সমবেত হন তাঁদের খাওয়ার দায়িত্ব এদিন স্বেচ্ছায় আপামর শহরবাসীর। ফলে দোলের সকালে রং খেলার হুল্লোড়ের বদলে ধোপ দুরস্ত পাঞ্জাবি পড়ে ভান্ডারা সামলাতেই বেশি পছন্দ করছে নবদ্বীপ।

দোল উপলক্ষে নবদ্বীপে ভিড় করেন লাখো মানুষ। পায়ে পায়ে তাঁরা ঘুরে বেড়ান চৈতন্যস্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন এই জনপদের গলি থেকে রাজপথ। সেই সব বহিরাগত মানুষের জন্য প্রসাদ বিতরণের বিপুল আয়োজন থাকে মহাপ্রভু ভান্ডারায়। বাদ পড়েন না স্থানীয়রাও। শহরের প্রায় সব পাড়াতেই শুরু হয়ে যায় ভান্ডারা। প্রায় সব বাজার কমিটি কিংবা ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিসিডিএ-র নবদ্বীপ শাখা ভান্ডারার আয়োজন করে। তবে সবচেয়ে বড় আয়োজন করেন নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। গৌরাঙ্গ সেতুর উপর তিন দিন ধরে যাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুষ্পান্ন, আলুর দম ও পায়েস।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabadwip

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}