Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Disabled Student

হাত অকেজো, সাহায্য নিয়ে মাধ্যমিকে সেলিম

চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনের ছাত্র সেলিমের জন্ম থেকেই ডান হাতটি অকেজো। ওই হাত সে তুলতে পারলেও কোনও শক্তি না থাকায় কিছুই করতে পারে না সে ওই হাতে।

সেলিম (বাঁদিকে) ও বিক্রমজিৎ। নিজস্ব চিত্র

সেলিম (বাঁদিকে) ও বিক্রমজিৎ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৬
Share: Save:

জন্ম থেকেই তার ডান হাত চলে না। ভারী কিছু তোলা তো দূর, ওই হাতে কলম ধরারও ক্ষমতা নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। তার সঙ্গে দোসর পরিবারের আর্থিক অনটন। দুইয়ের বাধায় এক সময় পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল হরিহরপাড়ার পীরতলা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম সেখের। তবে লড়াইয়ে হার মানেনি ওই কিশোর। সব কিছু উপেক্ষা করেই এ বার সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে রাইটার নিয়ে।

চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনের ছাত্র সেলিমের জন্ম থেকেই ডান হাতটি অকেজো। ওই হাত সে তুলতে পারলেও কোনও শক্তি না থাকায় কিছুই করতে পারে না সে ওই হাতে। তার বাঁ হাতও আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। পাশাপাশি, তার কথা বলার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। ডান হাত অকেজো হওয়ায় যাবতীয় কাজ সেলিম বাঁ হাতেই করে। তবে বাঁ হাতে লেখার গতি কম বলে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে সেলিমের বাড়ির লোক সাহায্যকারী লেখক নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।

গত কয়েক দিন সাহাজাদপুর হাইস্কুলে রাইটারের সাহায্যেই পরীক্ষা দিচ্ছে সেলিম। পরীক্ষাকেন্দ্রের একটি ঘরে পিছনের দিকের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। সেলিম মুখে প্রশ্নের উত্তর বলছে। আর সেটাই তার উত্তরপত্রে লিখছে সদ্য দশম শ্রেণিতে ওঠা বিক্রমজিৎ দে। এদিন বিক্রমজিৎ বলে, ‘‘সেলিমদা খুব ভাল পরীক্ষা দিচ্ছে। ও মুখে বলে আর আমি সেটা উত্তরপত্রে লিখি। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা।’’

মাধ্যমিক পাশ করার পর কলা বিভাগে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায় সে। সেলিমের বাবা এনামুল শেখ একজন চাষি। তবে সন্তানের পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনওরকম অবহেলা করতে দেন না তিনি। ছেলেকে নিয়মিত স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, সেখান থেকে আনা, পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া— সবই করেন এনামুল।

এদিন তিনি বলেন, ‘‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও ওর প্রচণ্ড মনের জোর। ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই চাই।’’ সেলিমের ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। চোঁয়া বিবিপাল বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও ওর হার না মানা মানসিকতা সেলিমকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। মাধ্যমিকে ও ভাল ফল করবে বলেই আমরা আশা করছি।’’ সেলিম বলে, ‘‘ বাংলা, ইংরেজি এবং ভূগোল পরীক্ষা আমি ভালই দিয়েছি।’’ সাহাজাদপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয় রায় বলেন, ‘‘ওর কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সে দিকে আমরা নজর রাখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE