Advertisement
E-Paper

আশ্রমের অন্দরে চক্রান্তের গন্ধ

একে একে বেহাত হয়ে গিয়েছিল আশ্রমের লাগোয়া জমি। মাস কয়েক হল, হাত পড়েছে আশ্রমের খোলা মাঠেও। চাকদহ শিমুরালির ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের ছিন্নমূল মেয়েরা তাঁদের শেষ ঠাঁইটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সাড়া মিলেছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ককেও বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছেন মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। সেই ভাগীরথী শিল্পাশ্রমে পা রাখল আনন্দবাজার—

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৩
বেহাল: এমনই ভগ্নপ্রায় দশা আশ্রমের। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: এমনই ভগ্নপ্রায় দশা আশ্রমের। নিজস্ব চিত্র

একে একে বেহাত হয়ে গিয়েছিল আশ্রমের লাগোয়া জমি। মাস কয়েক হল, হাত পড়েছে আশ্রমের খোলা মাঠেও। চাকদহ শিমুরালির ভাগীরথী শিল্পাশ্রমের ছিন্নমূল মেয়েরা তাঁদের শেষ ঠাঁইটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সাড়া মিলেছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ককেও বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছেন মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। সেই ভাগীরথী শিল্পাশ্রমে পা রাখল আনন্দবাজার—

দ্বিজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের পালিতা কন্যা ভাগীরথীর বেড়ে ওঠা এই আশ্রমেই। বাবার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রমের দেখভাল করতেন তিনি নিজেও। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু হয় দ্বিজেন্দ্রনাথের। আশ্রমের হাল ধরেন ভাগীরথী নিজে। আশ্রমের প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে কড়া নজর ছিল তাঁর। প্রেম বাহাদুর বলেন, ‘‘আশ্রমের প্রতি দিদির টানই ছিল আলাদা। অথচ তাঁর মৃত্যুর ক’বছরের মধ্যেই কেমন যেন ক্ষয় ধরল আশ্রমে।’’

দ্বিজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর আশ্রমের পুরো দায়িত্বই ভাগীরথীকেই নিতে হয়। আশ্রমের মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টা ভাবিয়েছিল তাঁকে। সেই ভাবনা থেকেই ১৯৮০ সালে দ্বিজেন্দ্রনাথের নামে আশ্রমের মধ্যেই শুরু হয় স্কুল। দ্বিজেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে নিজের সংসার চালিয়ে আশ্রমের চাষ-বাস পুরোপুরি দেখা সম্ভব হত না তাঁর পক্ষে। ফলে আয় কমে। তবে সরকারি অনুদান জুটে যায়।

সমাজ কল্যাণ দফতর এবং জনশিক্ষা দফতর থেকে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা অনুদান পায় এই আশ্রম। ক্রমে আবাসিকের সংখ্যা বাড়লেও অনুদান বাড়েনি। ২০১০ সালে ২০ অক্টোবর আশ্রমের আবাসিকদের কাছে কালো দিন। স্কুলের শিক্ষক সোমা হালদার বলেন, ‘‘ওই দিন বড়দির (ভাগীরথীকে এই নামেই ডাকতেন আশ্রমের সকলে) মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই শুরু হয় আশ্রমের দুরবস্থা।’’

ভাগীরথীর মৃত্যুর আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে আশ্রমে আসতেন সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা সর্বাণী মুখোপাধ্যায়। সোমা বলেন, ‘‘বড়দি বেঁচে থাকতেই সর্বাণীদি পরিচালন কমিটিতে ঢুকে পড়েন। অনাথ মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে তাঁর ভাল লাগে বলতেন সব সময়। কিন্তু শেষটা যে এমন হবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি।’’ সোমার কথায় সায় দিলেন অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মীরাও।

কোন শেষের দিকে ইঙ্গিত করছেন তাঁরা? প্রেমবাহাদুর লামা বলছেন, ‘‘স্যারের সময় আমরা একটা পরিবার ছিলাম। এখন আশ্রমের দিকে তাকাতেই খারাপ লাগে। এই কমিটিটাই যেন কেমন। সব ছারখার হয়ে গেল।’’ আশ্রমের পুরনো কর্মীরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিনের পরিচিতির সুবাদেই সর্বাণীকে কমিটিতে এনেছিলেন ভাগীরথী। তাঁর মৃত্যুর পরে কমিটির সভাপতি হন সর্বাণী। সম্পাদক হন ভাগীরথীর মেয়ে সুমনা দত্ত। বছর দেড়েকের ব্যবধানে আশ্রম ছাড়তে বাধ্য হন ভাগীরথীর ছেলেমেয়ে। রহস্যজনক ভাবে ভাগীরথীর কিশোর পুত্রের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

সোমা বলেন, ‘‘হোমের একটা মেয়েকে দিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছিল। এটা যে চক্রান্ত, তা আমরা সবাই বিশ্বাস করি।’’ কাদের চক্রান্ত?

(চলবে)

Monastery Conspiracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy