শুভেন্দু বিদায়ের পরে মঙ্গলবার দলের বর্ধিত সভা সেরে জেলা পরিষদের কনফারেন্স হল থেকে জেলা নেতারা যখন হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে এলেন, তখন যে আলগা বিজ্ঞাপণটা ছড়িয়ে দিতে চাইলেন তাঁরা, তা যে খুব মজবুত নয় দলের অন্দরের গুঞ্জনেই তা স্পষ্ট। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “তৃণমূল ভবনের শেখানো বুলি উগরে কী আর বাঁধন শক্ত করা যায়!”
সদ্য পদ্ম পাতায় আশ্রয় নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, যিনি কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে ভাঙন ধরিয়ে প্রায় সাইনবোর্ড করে দিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসকে। দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেস ভাঙিয়ে মুর্শিদাবাদের তৃণমুলকে সমৃদ্ধ করার সেই কারিগর এবার বিজেপিতে গিয়ে একই খেলা খেলবেন কিনা তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে এই পৌষে কাঁপন ধরেছে। সেই সময় তৃণমূলের যে নেতারা তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন এবং এখনও তাঁদের সঙ্গে যে শুভেন্দুর নিয়মিত যোগাযোগ আছে সে কথা শাসক দলেরও অজানা নেই। ফলে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির হয়ে তৃণমূলের ঘরে ভাঙন যে ধরবে না সে কথা জোড় দিয়ে অবশ্য বলতে পারছেন না কেউ।
এরই মাঝে ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। জোড়া ফুলের এই ভাঙনের সময় কংগ্রেস থেকে দলবদলে ফেলা পুরোনো মুখেদের যে ফের প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে এমন ইঙ্গিতও মিলছেকংগ্রেস নেতাদের কাছে। কংগ্রেসের এক তাবড় জেলা নেতা দাবি করেন, “পাপ করলে তার ফল ভুগতে হয়। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া নেতা কর্মীদের অনেকে এখন নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছে।” ফলে ‘ঘর ওয়াপসি’র আশায় বুক বাঁধছে জেলা কংগ্রেসও। জেলার আনাচ কানাচ ঘুরে জনসভা করা শুরু করেছেন লোকসভার বিরোধী নেতা তথা সাংসদ অধীর চৌধূরী। সেই সব সভায় যথেষ্ট ভিড়ও হচ্ছে বলে কংগ্রেসের দাবি।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ২২টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল চারটি আসন।
তবে শুভেন্দু অধিকারীর টোপ গিলে দল বদলে ফেলেছিলেন অধিকাংশই। এবার তাঁরা বিজেপি না পুরোনো দল কংগ্রেসমুখী—সে কথা সময় বলবে। কিন্তু তার আগে বড়সড় এক অনিশ্চয়তার প্রশ্ন ঝুলে গিয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সামনে। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র মহফুজ আলম (ডালিম) বলেন, “ হিসেবটা মিলিয়ে নেবেন। এবার নির্বাচনে আমরা বাইশে বাইশ।”
কংগ্রেসের মেজ সেজ নেতারাও দলবদলের এই নিরন্তর খেলায় কিঞ্চিত আশাবাদী। তবে তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর সৌমিক হোসেন হুঙ্কার দিচ্ছেন, “জেলায় বিজেপির কোন অস্তিত্বই নেই। বিজেপির সভায় ভিড় করছে সিপিএম, কংগ্রেসের লোকেরা।’’
তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি এক হয়ে গেলেও মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দেবে। ‘ঘর ওয়াপসি’ কংগ্রেসের অলীক কল্পনা।”