Advertisement
E-Paper

ধর্মঘট হলেই কর্মবিরতি, জমছে মামলার পাহাড়

বন্‌ধে-ধর্মঘটে সরকারি বা আধা-সরকারি কর্মচারীরা অফিসে না এলে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। অথচ যে কারও ডাকা বন্‌ধ মানেই আদালতে কর্মবিরতি। এমনই সিদ্ধান্ত বার অ্যাসোসিয়েশনের। যেমন, শুধু এই সপ্তাহেই দু’দিন— সোমবার ছিল জঙ্গিপুর মহকুমা বন্‌ধ, আর শুক্রবার দেশ জোড়া শিল্প ধর্মঘট।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৯

বন্‌ধে-ধর্মঘটে সরকারি বা আধা-সরকারি কর্মচারীরা অফিসে না এলে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।

অথচ যে কারও ডাকা বন্‌ধ মানেই আদালতে কর্মবিরতি। এমনই সিদ্ধান্ত বার অ্যাসোসিয়েশনের। যেমন, শুধু এই সপ্তাহেই দু’দিন— সোমবার ছিল জঙ্গিপুর মহকুমা বন্‌ধ, আর শুক্রবার দেশ জোড়া শিল্প ধর্মঘট। দু’দিনই আদালতে যাননি আইনজীবীরা। এ দিকে মামলার পাহাড় জমছে।

কী হারে জমছে?

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হিসেব যা বলছে তাতে প্রতি মাসে এক হাজার করে মামলা বাড়ছে। জুনের শেষে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারে।

মহকুমা শহর হলেও ডোমকলে এখনও আদালত গড়ে ওঠেনি। অন্য চারটি মহকুমা ও জেলা জজ কোর্ট মিলিয়ে জেলায় মোট ৪৮টি এজলাস রয়েছে বিচারকদের। কিন্তু তাতে যে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না, বকেয়া মামলার সংখ্যাই সে কথা বলছে।

প্রতিবেশী জেলাগুলিতে কিন্তু পরিস্থিতি এমনটা নয়। বীরভূমে জেলা সদর সিউড়ি ও ৩ মহকুমা আদালত মিলিয়ে ৩৪ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ সেখানে বকেয়া মামলা মোটে ৫০ হাজারের আশপাশে। তা-ও যে মাসে মাসে লাফিয়ে বাড়ছে, তা নয়। বরং অনেক সময়েই কমছে। আর এক প্রতিবেশী, মুর্শিদাবাদের মতোই সীমান্ত জেলা নদিয়ায় বকেয়া মামলা এক লাখের কাছাকাছি। ৩৬ জন বিচারকের এজলাসে মামলা জমছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের মতো লাফিয়ে নয়। বড় জোর তিন-চারশো করে।

মুর্শিদাবাদে এমন হাল কেন?

পুলিশের মতে, সীমান্ত জেলা হওয়ায় এখানে অপরাধপ্রবণতা বেশি। জাল টাকা, পাচার, মাদক কারবারের রমরমা তো আছেই। তার উপরে আছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ।

বহরমপুর জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী আবু বাক্কার সিদ্দিকির ব্যাখ্যা, “এটা অপেক্ষাকৃত বড় জেলা। এক দিকে বাংলাদেশ, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড। লালগোলা, ভগবানগোলা, ফরাক্কা, রানিনগরের মতো কিছু এলাকায় অপরাধের হার বেশি। ফলে মামলাও বাড়ছে।”

জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটুর বক্তব্য, “আমরা বোধহয় এখন একটু বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি। সামান্য ঘটনাতেই ছুটছি পুলিশের কাছে। ভাইয়ে-ভাইয়ে কথা কাটাকাটি হলেও থানায় গিয়ে মামলা ঠুকে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, লোক আদালত ও প্রতিটি থানায় প্যারা লিগাল ভলান্টিয়ার্সের মাধ্যমে বাদি- বিবাদিকে বসিয়ে বিবাদ নিষ্পত্তির যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা কাজে লাগালে এত বাপাহাড় জমত না। তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে তাঁদের ভাতা দেয় সরকার। কিন্তু এই ব্যবস্থার প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। ফলে মামলা বাড়ছে।”

কান্দির সরকারি আইনজীবী সুনীল চক্রবর্তী কিন্তু কর্মবিরতিকে অনেকটাই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, “জেলার আদালতগুলিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি হয়েছে দীর্ঘদিন। কান্দিতে প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল আদালত। মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ এটাও।”

অন্য ত্রটিও দেখছেন কেউ-কেউ।

যেমন সদ্য সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে সরকারি আইনজীবী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভাল নয়। আদালতে মামলা আসে, কিন্তু যথাসময়ে সাক্ষীকে সমন পাঠানো হয় না। মামলার কপিও সময় মতো সার্ভ করা হয় না। মামলার ফাইল হারিয়ে যায় রহস্যজনক ভাবে। উচ্চ আদালতে কোনও নথি গেলে তা আর নীচের আদালতে সময়ে ফিরে আসে না অনেক সময়ে। ফলে বিচার এগোচ্ছে না। মামলার পাহাড় জমছে।”

হয়রান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিচারপ্রার্থীরা। পাহাড় ঠেলবে কে?

Strike Agitation Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy